নিজে থেকেই জুড়ে যাবে ভাঙা কেলাস, বাংলার গবেষকদের আবিষ্কারে তাজ্জব বিশ্ব

হাড় ভেঙে গেলে কিংবা কেটে গেলে প্রথাগত চিকিৎসা ছাড়াও অনেকক্ষেত্রেই সেরে ওঠে সেই ক্ষতস্থান। যেকোনো জীবদেহেই রয়েছে স্ব-নিরাময়ের এই ক্ষমতা। কিন্তু মানুষের তৈরি কোনো কৃত্রিম পদার্থ যদি এই বৈশিষ্ট দেখায়? অবাক লাগছে নিশ্চয়ই? হ্যাঁ, বিস্ময়কর হলেও সত্যি। এবার এমনই এক বিশেষ জৈব কেলাস তৈরি করে ফেললেন একদল ভারতীয় গবেষক। যার মধ্যে রয়েছে আরও এক আশ্চর্যকর ক্ষমতা। অটোমেটিক হিলিং। অর্থাৎ, বল প্রয়োগে ভেঙে ফেললে মুহূর্তের মধ্যেই তা আবার ফিরে যাবে তার পূর্ববর্তী গঠনে। 

খড়গপুর আইআইটি এবং কলকাতা আইআইএসইআরের গবেষকদের যৌথ প্রয়াসেই এই অসাধ্যসাধন। সম্প্রতি বিশ্বের প্রথম সারির বিজ্ঞান পত্রিকা ‘সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণা। 

প্রাথমিকভাবে ল্যাবরেটরিতে কেলাসটি তৈরি করা হয়েছিল আইআইএসইআর কলকাতায়। গবেষণায় যুক্ত ছিলেন দুই অধ্যাপক সি. মালা রেড্ডি এবং নির্মাল্য ঘোষ এবং তাঁদের শিক্ষার্থী তথা রিসার্চ স্কলার সুরজিৎ ভুঁইয়া ও শুভম চান্দেল। জৈব কেলাসটি তৈরির পরেই তাঁদের নজরে আসে স্ব-নিরাময়ের এই অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু তার পিছনে যুক্তিযুক্ত কোনো কারণ খুঁজে পাননি তাঁরা। পরবর্তীতে খড়গপুর আইআইটির গবেষক ভানুভূষণ খাটুয়া এবং রিসার্চ স্কলার সুমন্ত কুমার করণ রহস্যভেদ করেন এই ধাঁধাঁর। 

আরও পড়ুন
ঘূর্ণিঝড়ের ৫-৭ দিন আগেই পূর্বাভাস, দিশা দেখাচ্ছেন খড়গপুর আইআইটি’র গবেষকরা

“কিছু পদার্থ আছে, যাদের ওপর বল প্রয়োগ করলে তড়িৎ উৎপন্ন হয়। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই বিশেষ প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় পিজোইলেকট্রিসিটি। এই পিজোইলেকট্রিসিটির কারণে তৈরি আধানের আকর্ষণই ভেঙে যাওয়ার পরেও জোড়া পুনরায় জোড়া লাগায় এই কেলাসটিকে”, জানালেন খড়গপুর আইআইটি’র অধ্যাপক ডঃ ভানুভূষণ খাটুয়া। জানা গেল, সেলফ হিলিং-এর এই গোটা প্রক্রিয়াটাই ঘটে কয়েক মিলি সেকেন্ডের মধ্যে। ফলে আদৌ কেলাসটির মধ্যে যে ভাঙন ধরেছিল, তা স্বাভাবিক চোখে বুঝে ওঠাই দুষ্কর।

আরও পড়ুন
আন্টার্কটিকায় নতুন উদ্ভিদ প্রজাতি আবিষ্কার ভারতীয় গবেষকের

তবে এই কেলাসের বিশেষত্ব অন্য জায়গায়। “এর আগেও বহু সেলফ-হিলিং পদার্থ তৈরি হয়েছে ল্যাবরেটরিতে। তবে তাপমাত্রা ও চাপে বিশেষ পরিবেশ তৈরি করলে কেবলমাত্র এই বৈশিষ্ট দেখায় সেগুলি। এই কেলাসটি বিশ্বের প্রথম কোনো পদার্থ, যা স্বাভাবিক অবস্থাতেই সেলফ-হিলিং চরিত্র প্রদর্শন করে। ফলত, দৈনন্দিনের ব্যবহারেও আমরা কাজে লাগাতে পারি এই কেলাসটিকে”, জানালেন খড়গপুর আইআইটির রিসার্চ স্কলার সুমন্ত করণ। যদিও বর্তমানে তিনি পোস্ট ডক্টরাল গবেষণার জন্য রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। 

আরও পড়ুন
সুন্দরবনে নতুন অঙ্গুরিমাল প্রাণী আবিষ্কার প্রেসিডেন্সির গবেষকদের

২০১৮ সালে শুরু হয়েছিল এই গবেষণা। বিগত ৩ বছর অক্লান্তভাবেই রহস্য সমাধানের কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন ভারতীয় গবেষকরা। শেষ পর্যন্ত এবার সাফল্য পেলেন তাঁরা। সংশ্লিষ্ট গবেষকরা জানাচ্ছেন কেলাসটির স্ব-নিরাময়ের এই ম্যাজিক্যাল চরিত্রের কারণে বহুলভাবে এটিকে ব্যবহার করা সম্ভব মোবাইল, কম্পিউটার কিংবা যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের স্ক্রিনে। এই উপাদানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা যেতে পারে বিভিন্ন ধরনের সেন্সার। পাশাপাশি মহাকাশ প্রযুক্তিকেও নতুশ দিশা দেখাবে এই কেলাসের ব্যবহার, সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ আশাবাদী তাঁরা। অভিনব এই আবিষ্কারকে এক কথায় যুগান্তকারী বলাই চলে। ভারতীয় গবেষকদের এই কৃতিত্বে তাজ্জব গোটা বিশ্বই…

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More