বিশ্বের অন্যতম কঠিন ধাঁধাঁ, ১৬১ বছর পরে সমাধান ভারতীয় গবেষকের

এক থেকে দশের মধ্যে যে চারটি মৌলিক সংখ্যা রয়েছে, তা মুহূর্তেই বলে দিতে পারে যে কেউ। আর এক থেকে একশোর মধ্যে অবস্থিত মৌলিক সংখ্যা ক’টি, তা জিজ্ঞেস করলে খানিক বেগ পেতে হবে। একপ্রকার গাঁট গুনেই দিতে হবে সেই উত্তর। এবার এই একই প্রশ্ন যদি জিজ্ঞেস করা হয় ১ থেকে ১০০ কোটির মধ্যে? সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। ১৮৬০ সালে এমনই এক ধাঁধাঁর জন্ম দিয়েছিলেন গণিতবিদ জর্জ বার্নার্ড রেইম্যান। আর তাঁর অভিমত ছিল, এই প্রশ্নের সমাধান সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব। তবে জীবদ্দশায় তার প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হন রেইম্যান।

তারপর পেরিয়ে গেছে ১৬১ বছর। এর মধ্যে বিশ্বের বহু তাবড় গণিতজ্ঞ লড়াই করেছেন এই প্রশ্নের সঙ্গে। কিন্তু রহস্য সমাধানে সাফল্য পাননি কেউ-ই। এবার এক ভারতীয় পদার্থবিদের দৌলতেই যবনিকা পতন হল এই রহস্যের। হায়দ্রাবাদের গাণিতিক পদার্থবিদ কুমার ঈশ্বরণই প্রমাণ দিলেন ভুল ছিলেন না রেইম্যান। বাস্তবেই সহজ পদ্ধতিতে নির্ণেয় উত্তর দেওয়া সম্ভব।

তবে আজ নয়। এই সমাধান তিনি দিয়েছিলেন বছর পাঁচেক আগেই। ২০১৬ সালে। তবে কোনো বিজ্ঞান পত্রিকায় গবেষণাপত্রের আগের প্রকাশিত হয়নি তাঁর সেই আবিষ্কার। হালকা মেজাজে নিজের দাবির সম্পর্কে যথাযথ যুক্তি দিয়েই তিনি সেই তত্ত্ব প্রকাশ করেছিলেন ইন্টারনেটে। ফলত, সেসময় কোনো স্বীকৃতিই মেলেনি তাঁর। নিজেও কোনো বিজ্ঞান সংস্থার কাছে স্বীকৃতির জন্য দাবি করেননি ঈশ্বরণ। 

তবে সম্প্রতি আকস্মিকভাবেই ঈশ্বরণের সেই গবেষণাপত্রটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ইন্টারনেট মাধ্যমে। হতে থাকে হাজার হাজার শেয়ার, ডাউনলোড। তারপরই বিষয়টি নজরে আসে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক গণিতজ্ঞের। বিশ্বের প্রথম সারির ৮ গণিতজ্ঞ এবং তাত্ত্বিক পদার্থবিদ নিজে থেকেই উদ্যোগ নেন, ঈশ্বরণের এই দাবি খতিয়ে দেখার জন্য। পৃথিবীর খ্যাতনামা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় দেড় হাজার গবেষক ও অধ্যাপকদের নিয়ে গঠিত হয় বিশেষ কমিটিও। ঈশ্বরণের সমাধান পরীক্ষা করেই চমকে ওঠেন তাঁরা। না, ভুল নয় ভারতীয় পদার্থবিদের এই গবেষণা। তবে বিরূপ মন্তব্যও প্রকাশ করেছেন অনেকে। এখনও পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা ক্লে ইনস্টিটিউট যাচাই করেনি ঈশ্বরণের এই তত্ত্ব। ফলত, প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি আসেনি এখনও। তবে সেই প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হবে বলেই জানা গেছে।

আরও পড়ুন
প্রাচীন পুঁথিতে লুকিয়ে গণিতের অজানা ইতিহাস, উত্তর খুঁজছেন বাঙালি গবেষক

হায়দ্রাবাদের শ্রীনিধি ইনস্টিটিউট অগ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে বর্তমানে অধ্যাপনা করেন ঈশ্বরণ। সোলার ড্রায়ার, কোয়ান্টাম ডায়নামিক্স, ডুয়াল ইন্টিগ্রাল ইক্যুয়েশন, উচ্চ শক্তি পদার্থবিদ্যা, ডাইমেনশন রিডাকশনের ওপরেও বহু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা রয়েছে তাঁর। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না করলেও, রেইম্যান হাইপোথিসিসের সমাধানই তাঁকে করে তুলল বিশ্ববিখ্যাত।

আরও পড়ুন
পরিবারের মধ্যেই গণিত নিয়ে রেষারেষি, বার্নৌলিদের সঙ্গে জড়িয়ে অদ্ভুত ইতিহাস

২০০০ সালে¸ কেমব্রিজের ক্লে ইনস্টিটিয়ট এই শতাব্দীর কঠিনতম ১০টি অঙ্কের মধ্যে রেখেছিল রেইম্যান হাইপোথিসিসকে। ঘোষণা করা হয়েছিল, প্রতিটি ধাঁধাঁর সমাধান দিলে ১০ লক্ষ মার্কিন ডলারের পুরস্কার দেওয়া হবে গবেষকদের। ধারণা ছিল, আগামী হাজার বছরের মধ্যেও উত্তর পাওয়া যাবে না এই প্রশ্নগুলির। ২০০৭ সালে ক্লে’র এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছিলেন গ্রেগরি পেরেলম্যান। রেইম্যানিয়ান জিওমেট্রির প্রমাণ দিয়েছিলেন তিনি। এবার ঈশ্বরণের প্রমাণ দিলেন ‘রেইম্যান হাইপোথিসিস’-এর। ফলে, আরও খানিকটা সংকুচিত হল কঠিনতম গাণিতিক ধাঁধাঁর তালিকা। বাস্তবে বিজ্ঞানের কাছে যে অসম্ভব বলে কিছুই নেই, এ যেন তারই প্রমাণ…

Powered by Froala Editor