দিনকয়েক আগে, নীরবেই চলে গেলেন শরদচন্দ্র শঙ্কর শ্রীখণ্ডে। বয়স হয়েছিল ১০৩। সম্প্রতি বিজয়ওয়াড়ায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মধ্যপ্রদেশের এই গণিত বিজ্ঞানী ও পরিসংখ্যানবিদ। অয়লারের একটি থিওরেম-এর ভুল প্রমাণ করে সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত ছিলেন ‘অয়লার’স স্পয়লার’ নামেই।
বিখ্যাত গণিতজ্ঞ লিওনার্দো অয়লার মৃত্যুর আগে ১৭৮২ সালে তৈরি করেন একটি গাণিতিক ধাঁধাঁ। ধরা যাক, ছটি রেজিমেন্ট থেকে মোট ৩৬ জন মিলিটারি অফিসার রয়েছেন। ৬টি সারির প্রতিটিতে রয়েছেন ৬ জন করে অফিসার। এই বর্গক্ষেত্রের মধ্যে কীভাবে তাঁদের সজ্জিত করা সম্ভব, যাতে কোনো সারিতে বা স্তম্ভে তাদের ক্রম এবং রেজিমেন্ট একবারের বেশি পুনরাবৃত্তি না হয়? এমনটাই ছিল অয়লারের সেই ধাঁধাঁ। জীবদ্দশায় মেলাতে পারেননি তিনি। এই স্ট্যাটিস্টিকাল সজ্জার কোনো সমাধান নেই, এমনটাই মনে করেছিলেন তিনি।
পরবর্তীকালে একাধিক বিজ্ঞানী কাজ করেছিলেন এই সমস্যার সমাধানে। শেষ পর্যন্ত ১৭৭ বছর পর ১৯৫৯ সালে ভারতীয় বিজ্ঞানী শরদচন্দ্র সমাধান করেছিলেন সেই ধাঁধাঁ। গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁর শিক্ষক আর.সি. বোস এবং সহকর্মী ই.সি. পার্কার। অয়লারের এই অনুমান ভুল প্রমাণ করে বিশ্বের সামনে প্রশংসা পেয়েছিলেন তিনি। আমেরিকান ম্যাথামেটিকাল সোসাইটি বিশেষ সম্মান জানিয়েছিল তাঁকে। এই গবেষণার কথা প্রকাশ পেয়েছিল নিউ ইয়র্ক টামসের প্রথম পাতায়। তিন বিজ্ঞানীর এই দলকে নামকরণ করা হয়েছিল ‘অয়লার’স স্পয়লারস’ হিসাবে। এই গবেষণা পরবর্তীকালে পরিসংখ্যান তত্ত্বের একটি নতুন শাখা খুলে দেয়।
এছাড়াও তাঁর গবেষণার আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় শ্রীখন্ডে গ্রাফ। যা গোষ্ঠীতত্ত্ব, টপোলজির সঙ্গে বীজগণিতের সম্পর্ক স্থাপন করে। গণিত ছাড়িয়েও এই গ্রাফের বিস্তার ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার সায়েন্স, এমনকি ম্যানেজমেন্টেও।
প্রায় কয়েক দশক ধরে তিনি নিযুক্ত ছিলেন গবেষণার কাজে। কাজ থেকে অবসর নিয়েছিলেন ১৯৭৮ সালে। তবে শিক্ষকতা ছাড়েননি। নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্মানিক অধ্যাপক হিসাবেই অধ্যাপনা করেছেন ১৯৮২ পর্যন্ত। সংযুক্তিকরণ তত্ত্ব এবং পরিসংখ্যান বিন্যাসের জগতের তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। অনুপ্রাণিত করেছেন অনেক ছাত্রকে। যাঁরা বর্তমানে তাঁর দেখানো পথেই চালিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখযোগ্য নানান গবেষণা।
তাঁর মৃত্যুর সংবাদে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবং গণিত বিভাগের প্রধান অরুণ মুক্তিবোধ উল্লেখ করেন, তাঁর মতো নিয়মনিষ্ঠ এবং প্রতিভাবান গণিতজ্ঞ খুব কমই এসেছে এই যুগে। প্রবাদপ্রতিম এই বিজ্ঞানীর উপরে কয়েকবছর আগেই তিনি একটি তথ্যচিত্র বানিয়েছিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই সেই তথ্যচিত্রটি ইউটিউবে আপলোড করবেন তিনি। এমনটাই জানান ডঃ অরুণ মুক্তিবোধ। বর্তমান প্রজন্মের কাছে তাঁর কাজ পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এই উদ্যোগ।