ঘূর্ণিঝড়ের ৫-৭ দিন আগেই পূর্বাভাস, দিশা দেখাচ্ছেন খড়গপুর আইআইটি’র গবেষকরা

“সমুদ্রপৃষ্ঠে ক্রমাগত উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে বায়ুর চাপের তারতম্য তৈরি হলে জন্ম নেয় ট্রপিকাল সাইক্লোন। তারপর তা ক্রমে এগিয়ে আসে স্থলভাগের দিকে। সমুদ্রের ওপরে সৃষ্ট ঘূর্ণায়মান মেঘপুঞ্জের ছবি স্যাটেলাইটে ধরা পড়লে তবেই একমাত্র ইঙ্গিত পাওয়া যায় সাইক্লোনের। এই পদ্ধতিতেই আইএমডি ফোরকাস্ট করে ঘূর্ণিঝড়ের। কিন্তু ততদিনে ভয়ঙ্কর রূপ নেয় তার চেহারা। সাইক্লোন চিহ্নিতকরণের পর, স্বল্প সময়ে আগাম বিপর্যয়ের প্রস্তুতি নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় প্রশাসনের কাছে।”

বলছিলেন খড়গপুর আইআইটির ওসান ইঞ্জিনিয়ারিং এবং নাভাল আর্কিটেকচার বিভাগের অধ্যাপক তথা গবেষক ডঃ প্রসাদ কে ভাস্করণ। ডঃ ভাস্করণ এবং খড়গপুরের আরও দুই রিসার্চ স্কলার— জিয়া অ্যালবার্ট এবং বিষ্ণুপ্রিয়া সাহু-র যৌথ গবেষণাই এবার সমাধান দিল এই সমস্যার। তাঁদের দৌলতেই এবার প্রকাশ্যে এল ট্রপিকাল সাইক্লোনের নতুন ট্র্যাকিং সিস্টেম। যা অন্ততপক্ষে ৫ থেকে ৭ দিন আগেই সংকেত দেবে আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের। ফলে, স্থলভাগে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের সময় পাবে প্রশাসন কিংবা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। অনেকটাই এড়ানো যাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। 

কিন্তু স্যাটেলাইট চিত্র ছাড়াই কীভাবে তাঁরা চিহ্নিত করছেন ঘূর্ণিঝড়কে? “আসলে মেঘের মধ্যে দৃশ্যমান ঘূর্ণাবর্ত তৈরির আগেই বায়ুমণ্ডলীয় স্তরে জন্ম নেয় সাইক্লোন। সমুদ্র এবং বায়ুমণ্ডলের এই কমপ্লেক্স ইন্টার্যা কশনের কারণে উচ্চ বায়ুমণ্ডলে ঘূর্ণায়মান বায়ুর স্তম্ভ তৈরি হয়। তার উচ্চতা বদল হতে থাকে প্রতিনিয়ত। আমাদের গবেষণা সাইক্লোনের এই প্রাথমিক পর্যায়ের চরিত্রের ওপর”, উত্তর দিলেন ডঃ ভাস্করণ। 

সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতার পরিবর্তন এবং বায়ুমণ্ডলীয় স্তম্ভের চরিত্র বদলকে রিমোট সেন্সিং এবং গাণিতিক পদ্ধতির মাধ্যমে চিহ্নিত করেছেন খড়গপুর আইআইটির গবেষকরা। আর তার ফলেই বহু আগে থেকেই পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের। এর আগে ফাইলিন, মাদি, আইলা, মোরা-র মতো ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করে দেখেছিলেন তাঁরা। তাতে সাফল্য মেলার পরেই এই চূড়ান্ত মডেল এবার তৈরি করে ফেলেছেন। আগামীদিনে অ্যাডভান্স ফোরকাস্টিং-এর জন্য আইএমডিও এই পদ্ধতিকে ব্যবহার করতে চলেছে। সম্প্রতি ‘অ্যাটমোস্ফিয়ারিক রিসার্চ’ বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্রটি। আপাতত পেন্টেন্ট রেজিস্টারের কাজ চলছে এই পূর্বাভাস পদ্ধতিটির। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির প্রচলন শুরু হলে, আগামীতে অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে ঘূর্ণিঝড়ের বিরুদ্ধে লড়াই… 

আরও পড়ুন
১৯৭০-এর প্রাণঘাতী ভোলা সাইক্লোনে মারা গিয়েছিলেন ৫ লক্ষ বাঙালি!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
‘শবদেহ ইতস্ততঃ পড়িয়া রহিয়াছে’, ১৮৬৪-র সাইক্লোনে ছারখার চব্বিশ পরগনা