১২ বছর ধরে ফেলে দেওয়া জাতীয় পতাকা সংগ্রহ করেন হাওড়ার প্রিয়রঞ্জন

উৎসবের জৌলুসে পেরিয়ে যায় একেকটি স্বাধীনতা দিবস। পাড়ায় পাড়ায় হয় দেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন। কিন্তু সূর্য ডুবে গেলেই যেন যাবতীয় দেশপ্রেম টুপ করে অস্ত যায়। তখন আর সেইসব পতাকার কী হল, খবর রাখেন না কেউই। কখনো রাস্তার ধারে, কখনো নর্দমায় পড়ে তাকে স্বাধীনতার প্রতীক। বেশিরভাগ মানুষই সেদিকে ফিরেও তাকান না। কিন্তু কেউ কেউ তো থাকেন ভিড়ের মধ্যেও ব্যতিক্রম। তেমনই একজন মানুষ বালি নিশ্চিন্দার বাসিন্দা প্রিয়রঞ্জন সরকার। এলাকার লোকজনের কাছে তিনি পরিচিত মনু নামেই।

স্বাধীনতা দিবস এবং প্রজাতন্ত্র দিবসের পরের দুদিন রাস্তায় ঘুরে ঘুরে পড়ে থাকা জাতীয় পতাকা সংগ্রহ করেন মনু। তারপর সেগুলো ভরে রাখেন নিজের ঘরের একটি বাক্সে। বিগত ১২ বছর ধরে এভাবেই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। অনেকে বলেন কাগজ কুড়ানি, কেউ অবজ্ঞা করেন কেউ টিপ্পনি কাটেন। কিন্তু সেসবের দিকে ভ্রূক্ষেপ থাকে না মনুর। কিন্তু কেন এমন করেন তিনি? কারণ, তাঁর কথায়, জাতীয় পতাকাও তো মা। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন মনু। মা আভাদেবী অনেক কষ্ট করে বড় করেছেন তাঁকে। তিনিই শিখিয়েছিলেন, মনুর আরেক মা আছে। সেটা এই জাতীয় পতাকা। আভাদেবীও পতাকা পড়ে থাকতে দেখলে মাথায় ঠেকিয়ে তুলে রাখতেন। আজ তাঁর সেই কাজকেই এগিয়ে নিয়ে চলেছেন মনু।

তবে এখন অনেকেই তাঁর কাজের মর্ম বুঝতে পারছেন। বর্ধমান, শ্রীরামপুর থেকে শুরু করে হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় তরুণ-তরুণীরা মনুর সঙ্গী হয়ে রাস্তায় নামেন দুদিন। আর ২০ ফুট বাই ১৫ ফুট আয়তনের টিনের বাক্সের ডালা খুলে মনু দেখিয়ে দেন, সেখানে অন্তত ১৪-১৫ হাজার পতাকা আছে। কিন্তু এই বাক্স যেদিন ভরে যাবে? সেদিন অন্য বাক্স কিনতে হবে। আর তাঁর এই উদ্যোগ তাঁর অবর্তমানেও থেকে যাবে বলে মনে করেন সেচ দপ্তরের কর্মী প্রিয়রঞ্জন সরকার। অনেকে অবজ্ঞা করেন এখনও। কিন্তু তার মধ্যেও সচেতনতা তৈরি কাজটা নীরবেই চালিয়ে যান মনু।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
রামধনু পতাকা ওড়ানোর ‘অপরাধে’ একদা কারাবন্দি, ৩০ বছর বয়সেই প্রয়াত সারা হিগাজি