রামধনু পতাকা ওড়ানোর ‘অপরাধে’ একদা কারাবন্দি, ৩০ বছর বয়সেই প্রয়াত সারা হিগাজি

রামধনু পতাকার মতোই সারা হিগাজি হয়ে উঠেছিলেন অন্য যৌনতার মানুষদের সামাজিক আন্দোলনের প্রতীক। অনেকে তাঁকে 'রেনবো ফ্ল্যাগ' বলেও চিনতেন। মাত্র ৩০ বছর বয়সেই সমস্ত সহযোদ্ধাদের ছেড়ে বিদায় নিলেন সারা। গত রবিবার ১৪ জুন কানাডায় নিজের বাসগৃহে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

মাত্র তিন বছর আগে সারা বিশ্বের সামনে উঠে এসেছিল সারার নাম। একটি মিউজিক কনসার্টে রামধনু পতাকা ওড়ানোর অপরাধে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ইজিপ্ট পুলিশ। সেদিনের সেই অনুষ্ঠানে মঞ্চে ছিলেন 'মাসরউ ল্যায়লা' ব্যান্ডের শিল্পীরা। তাঁদেরও অনেকেই ভিন্ন যৌনতার মানুষ। সেইসব সহযোদ্ধা বন্ধুদের উদ্দেশ্যেই রামধনু পতাকা দেখিয়েছিলেন সারা। কিন্তু বিষমকামী নীতিবাগীশদের পক্ষে এই 'অপরাধ' মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাস থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ লক-আপে কাটে সারার জীবন।

এরপর মুক্তি পেয়ে চলে যান কানাডায়। সেখানে নতুন করে শুরু হয় সামাজিক সচেতনতা তৈরির কাজ। কিন্তু কয়েক হাজার বছরের মানসিকতার সঙ্গে লড়াইতে সহজে জয়লাভ তো সম্ভব নয়। সারার জীবনও তাই এগোচ্ছিল জয়-পরাজয়ের দুই নৌকায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেই পরাজয় স্বীকার করে নিলেন। সারার মৃত্যুকে তাই আত্মহত্যা বলতে রাজি নন অনেকেই। এই সমাজের একমাত্রিক মানসিকতাই তাঁকে খুন করেছে, সামাজিক মাধ্যমে উঠে আসছে এমন বক্তব্য।

এই পৃথিবীর দীর্ঘদিনের প্রচলিত ধারণার সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংঘাত ঘটে চলে। বেশিরভাগ সময়েই তাঁদের গ্রাস করে একাকিত্ব, অবসাদ। সারার মৃত্যুর জন্যও ডিপ্রেসনকেই দায়ী করছেন মনস্তাত্ত্বিকরা। কিন্তু একটু চেষ্টা করলেই কি সমাজের সমস্ত মানুষ একসঙ্গে বেঁচে থাকতে পারি না? প্রকৃতির নানা বিচিত্র সৃষ্টির মতোই তো মানুষের চরিত্রও। এই একবিংশ শতকে এসেও যদি আমরা সেই বৈচিত্র্যকে সম্মান করতে শিখি, তাহলে হয়তো অনেক মানুষ জীবনে বেঁচে থাকার আনন্দ ফিরে পাবেন। পৃথিবী থেকে অকালে বিদায় নিতে হবে না অনেককেই।

আরও পড়ুন
"অপেক্ষায় আছি কোর্টের রায়ের", প্রহরকে জানালেন কেরালার সমকামী দম্পতি

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
সাতরঙা কার্পেট নিয়ে, কলকাতায় হাজির আফগানি সমকামী লেখক