গুপী-বাঘার খেরোর খাতা এবার অনলাইনে

দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করার আগেই মানসচক্ষে সেই সিনেমার নির্মাণ করে ফেলতেন সত্যজিৎ। আর তারপর সংলাপ থেকে শুরু করে দৃশ্যের ফ্রেম, তা ক্যামেরাবন্দি করার প্রযুক্তি তথা গোটা সিনেমার ঘটনাক্রম নিজের হাতে লিখে রাখতেন খাতায়। বা বলা ভালো খেরোর খাতায়। লাল কাপড়ে বাঁধানো সেই নোটবুক এককথায় অমূল্য রতন। এবার বাড়িতে বসেই চাক্ষুষ করতে পারবেন সত্যজিতের অমোঘ নির্মাণের সেই নীল-নকশা। এক ক্লিকেই খুলে যাবে গুপী-বাঘা সিনেমার জন্য সত্যজিতের স্বহস্তে লিপিবদ্ধ করা খেরোর খাতা। 

এই উদ্যোগের নেপথ্যে রয়েছেন প্রযুক্তিবিদ্যার সংস্কৃতিমনস্ক দুই তরুণ শিক্ষার্থী। অয়নাংশু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অনুব্রত চক্রবর্তী। দু’জনেই পাঠ্যরত ‘দ্য চ্যাটার্জি গ্রুপ’-এর ‘সেন্টার্স ফর রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন ফর সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’-তে। গুপী-বাঘার গোটা খেরোর খাতাটিকে ডিজিটাল রূপ দিয়েছেন তাঁরা। বর্তমানে একপ্লোররে ডট ওআরজি ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারলেই দেখতে পাওয়া যাবে এই অমোঘ নির্মাণ। এই বিশেষ ওয়েবসাইটটির নির্মাণের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন সন্দীপ রায়, মৃণাল সেনের পুত্র কুণাল সেন, পূর্ণিমা দত্তের মতো ব্যক্তিত্বরা এবং ‘সেন্টার ফর নিউ মিডিয়া’ নামক একটি সংস্থা। 

‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ চলচ্চিত্রের জন্য মোট দুটি খেরোর খাতা ব্যবহার করেছিলেন সত্যজিৎ। তার মধ্যে একটিতে ছিল গোটা চিত্রনাট্যের বিশদ বিবরণ। অন্যটির ৯০ পাতা জুড়ে শুধু তিনি অঙ্কন করেছিলেন ভূতের নাচের দৃশ্যের পটভূমি ও তাঁর বর্ণনা। তবে শুধু চিত্রনাট্যই নয়, সঙ্গে সিনেমায় ব্যবহৃত সঙ্গীত, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, স্পেশাল এফেক্টস, পোস্টার-সহ সবকিছু নথিই পাওয়া যাবে ওয়েবসাইটটিতে। 

এতদিন পর্যন্ত এই অমূল্য খেরোর খাতাটি ছিল সন্দীপ রায়ের মালিকানাধীন। প্রকাশিত হয়নি তার কোনো মুদ্রিত সংস্করণও। তবে এবার প্রযুক্তির দৌলতে এবং সংরক্ষণ করা গেল সেটি। পৌঁছে দেওয়া গেল চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে। সত্যজিতের জন্মশতবর্ষে এর থেকে বড়ো চমক আর কীই বা হতে পারে! দর্শকদের মধ্যে এই উদ্যোগ জনপ্রিয়তা পেলে আগামীদিনে সত্যজিতের অন্যান্য চলচ্চিত্রের খেরোর খাতারও ডিজিটালিজড ভার্সান প্রকাশিত হবে এই ওয়েবসাইটে, তেমনটাই জানাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। 

আরও পড়ুন
সাহস করে সত্যজিৎকে চিঠি লিখতে পারেননি নাসিরুদ্দিন

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
আত্মপ্রকাশ সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে; প্রয়াত কার্টুনিস্ট ও পরিচালক গৌতম বেনেগাল