কানে গোল্ডেন আই-জয়ী তথ্যচিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে কলকাতার তিন তরুণ-তুর্কি

সদ্য ফুরিয়েছে কান চলচ্চিত্র উৎসব। আর সেখানেই বাজিমাত করেছে পায়েল কাপাডিয়ার তৈরি তথ্যচিত্র ‘আ নাইট অফ নোয়িং নাথিং’। একমাত্র ভারতীয় চলচ্চিত্র হিসাবে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘গোল্ডেন আই’ পুরস্কার জিতে নিয়েছে এই তথ্যচিত্রটি। তবে পুনেতে এই ছবির শুটিং হলেও, ‘আ নাইট অফ নোয়িং নাথিং’-এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন কলকাতার একাধিক শিল্পীও।

রণবীর দাস, মৈনাক বসু এবং ভূমিসুতা দাস— এই তিন বঙ্গসন্তানকে ছাড়া অসম্পূর্ণ থেকে যেত ‘আ নাইট অফ নোয়িং নাথিং’। পার্ক সার্কাস ডন বসকোর প্রাক্তন ছাত্র রণবীর দাসের দৌলতেই ফ্রেমবন্দি হয়েছে কাপাডিয়া নির্মিত গোল্ডেন আই-জয়ী তথ্যচিত্রটি। তথ্যচিত্রটির এডিটরের ভূমিকাও পালন করেছেন তিনি। স্কটিশচার্চ কলেজের প্রাক্তনী মৈনাক বসু সামলেছেন শব্দ সংযোজনের কাজ এবং কণ্ঠ দিয়েছেন ‘গোবরডাঙা’ থিয়েটারের অভিনেত্রী ভূমিসুতা।

কিন্তু কীভাবে এই তথ্যচিত্র নির্মাণের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেন এই তিন বঙ্গসন্তান? মুম্বাইয়ের চলচ্চিত্র পরিচালকের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগই বা হল কীভাবে? সেই প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। আসলে রণবীর এবং মৈনাককে ছাত্রাবস্থা থেকেই চিনতেন কাপাডিয়া। তাঁরাও যে পুনের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে ভূমিসুতার সঙ্গে কাপাডিয়ার পরিচয় থিয়েটার অভিনয়ের সূত্রে। ২০১২ সালে ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন ভূমিসুতা। 

গোটা চলচ্চিত্রটি নির্মাণের সঙ্গে অমানবিক পরিশ্রম করেছেন তিন বঙ্গসন্তানই। ছকভাঙা এই তথ্যচিত্র মূলত নির্মিত কিছু চিঠির ছবির ওপর ভিত্তি করেই। আর সেগুলোকে সাজিয়েই অপূর্ণ প্রেম এবং রাজনীতির এক মায়াজাল বুনেছেন কাপাডিয়া। তবে যতটা সহজ, দৃষ্টিনন্দন গোটা পরিবেশনাটি; ঠিক ততটাই চ্যালেঞ্জিং ছিল এই ছবির ফুটেজ সংগ্রহ করা। পুনের এফটিআইআই তো বটেই পাশাপাশি বন্ধুবান্ধব এবং বিভিন্ন সংরক্ষণশালা ঘুরে ঘুরেই সেইসব ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন সিনেম্যাটোগ্রাফার রণবীর দাস। তারপর গোটা লকডাউন জুড়ে চলেছে সেইসব দৃশ্যের কাটা-ছেঁড়া। অক্লান্ত পরিশ্রমের পর সম্ভব হয়েছে গল্পের ভিত্তি নির্মাণ। 

আরও পড়ুন
সত্যজিতের সিনেমাটোগ্রাফার সুব্রত মিত্রের বাড়িতে ব্লু প্লেক, তৈরি হবে প্রদর্শনশালাও

তবে রেড কার্পেট কিংবা পুরস্কার দিয়ে সাফল্যকে বিচার করতে চান না কাপাডিয়া-সহ বাংলার তরুণ-তুর্কি তারকারা। বরং, নতুনত্ব উপস্থাপন করে কানের মতো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণই তাঁদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের আক্ষেপ ভারতীয় চলচ্চিত্র ক্রমশ ঝুঁকছে বাণিজ্যিকরণের দিকে। আর সেই কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব অধরা থেকে যাচ্ছে ভারতের কাছে। তবে সততা আর পরিশ্রম দিয়ে যে বিশ্বজয় সম্ভব, তা চোখে আঙুল দিয়েই দেখিয়ে দিচ্ছেন এই তরুণ শিল্পীরা।

আরও পড়ুন
প্রসঙ্গ ‘RAY’ : সাহিত্যের ভাষাকে সিনেমায় হুবহু দেখানোর দায় নেই পরিচালকের

অন্যদিকে এই তিন বঙ্গসন্তানের পাশাপাশি এবার রেড কার্পেটে হাঁটতে দেখা গেছে কলকাতার আরও এক তরুণ চলচ্চিত্রকারকে। সুমন সেন। মূল চলচ্চিত্র উৎসবের সমান্তরালভাবে আরও বেশ কিছু সিনেমার প্রদর্শিত হয় ‘লা ফেব্রিক সিনেমা দে ইনস্টিটিউট ফ্রেঞ্চ’-এর সৌজন্যে। গোটা বিশ্ব থেকে বাছাই করা ১০টি চলচ্চিত্রকে কান চলচ্চিত্র উৎসবে স্ক্রিনিং-এর সুযোগ করে দেয় এই প্রতিষ্ঠান। সেই বিভাগেই প্রদর্শিত হয়েছিল সুমন সেনের নির্মিত চলচ্চিত্র ‘একা’। অবশ্য ইংরাজি নাম ‘সোলো’। সুমনের তৈরি এই ছবির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ভারতের প্রথম সারির চলচ্চিত্র নির্মাতা অনুরাগ কাশ্যপও…

আরও পড়ুন
নির্বাক যুগেও একটি সিনেমার আয় সাত লক্ষ টাকা, নেপথ্যে হাওড়ার জ্যোতিষচন্দ্র

Powered by Froala Editor