বন্ধ হতে চলেছে ফিল্ম সার্টিফিকেশন অ্যাপিলেট ট্রাইবুনাল, ক্ষুব্ধ চলচ্চিত্র নির্মাতারা

‘অত্যন্ত স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র সরকার।’ কেন্দ্রীয় আইন ও বিচার মন্ত্রালয়ের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তকে ঘিরে এমনই প্রতিক্রিয়া জানালেন পরিচালক কমলেশ্বর মুখার্জি। আজই মন্ত্রালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, এবার থেকে কার্যত বন্ধ থাকবে ফিল্ম সার্টিফিকেশন অ্যাপিলেট ট্রাইবুনাল বা এফসিএটি। এতদিন ধরে সিনেমা সংক্রান্ত যাবতীয় বিতর্কের মীমাংসা করে এসেছে এই বোর্ড। এবার থেকে সমস্ত বিষয়ের মীমাংসা আদালতে হবে বলেই জানিয়েছে আইন ও বিচার মন্ত্রালয়।

পরিচালক ইন্দ্রাশিস আচার্য বলছেন, “এতদিন ধরে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের স্বর তুলে ধরার একটা জায়গা ছিল এই ট্রাইবুনাল। এমন অনেক সময়েই দেখা যেত, সেন্সর বোর্ড থেকে খুব ভালো একটা ছবির সার্টিফিকেশন পাওয়া গেল না। সেক্ষেত্রে বোর্ড এবং নির্মাতার মধ্যে সমঝোতার একটা রাস্তা খোলা ছিল। সেই পদ্ধতিটাই কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।” ১৯৮৩ সালে সিনেমাটগ্রাফ আইনের উপর নির্ভর করেই এই তৈরি করা হয়েছিল এফসিএটি। তখন থেকে এখনও পর্যন্ত নানা বিতর্ক সত্ত্বেও সফলভাবেই কাজ করে আসছে এই ট্রাইবুনাল। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক সিনেমা নিয়ে বিতর্ক কাজকে আরও কঠিন করেছে। কিন্তু এর মধ্যেও ২০১৭ সালে ‘লিপস্টিক আন্ডার মাই বুর্খা’, অথবা তারপর ‘বাবুমশাই বন্দুকবাজ’ সিনেমার ক্ষেত্রেও সামান্য কিছু পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে বিতর্কের মীমাংসা করেছে ট্রাইবুনাল।

আইন বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি চলচ্চিত্র সমালোচকদের মিলিত জুড়ির সামনে কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনা যতটা সহজ ছিল, আদালতে সেই আলোচনা ততটা সহজ হবে না সেকথা বলাই বাহুল্য। পরিচালক ইন্দ্রাশিস আচার্যের মতে, “হাইকোর্ট তো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা নয়। সেখানে আরও হাজার রকমের মামলা আসবে। আমরা কখনোই বলতে পারি না যে অন্যান্য মামলার চেয়ে সিনেমার বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে একটা সিনেমা নিয়ে দিনের পর দিন মামলা চললে তা প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলবে। ট্রাইবুনালের মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তির সুযোগটা সিনেমার ক্ষেত্রে সত্যিই প্রয়োজনীয় ছিল।” অন্যদিকে কমলেশ্বর মুখার্জির বক্তব্য, “পদ্ধতিগতভাবে ট্রাইবুনালের থেকে আদালতে প্রক্রিয়া কতটা আলাদা হবে বলতে পারব না। তবে স্বাধীন দেশে একজন শিল্পীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে, এটাই সবচেয়ে আপত্তির বিষয়। এভাবে তো বাকস্বাধীনতার উপরেই হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে।” শুধুই টলিউডের চলচ্চিত্র নির্মাতারা নন, দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকেও উঠছে একই বিরোধিতার সুর। শিল্পীদের বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ আগেও উঠেছে। এবার যেন সেই প্রক্রিয়াই খানিকটা আইনি সুবিধা পেল বলে মনে করছেন শিল্পীরা।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
জাতীয় পুরস্কার পেয়েও অনালোচিত সুদীপ্ত-ফারহা; মান কমছে সিনেমাপ্রেমী বাঙালির?

More From Author See More