শুধুমাত্র তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য মাদ্রাসা, দিনবদলের ইঙ্গিত পাকিস্তানে

ধর্মীয় বিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণই হোক কিংবা মসজিদে নামাজ-পাঠ— সরকারি ভাবে তাঁদের জন্য নিষেধাজ্ঞা নেই কোথাওই। কিন্তু তা সত্ত্বেও এসব জায়গায় অংশগ্রহণ করতে পারেন না পাকিস্তানের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা। প্রতি পদক্ষেপেই সেখানে তাঁদের জন্য অপেক্ষা করে থাকে সমাজের অশ্লীলতা। ধেয়ে আসে কটূক্তি। এবার বদলাতে চলেছে পাকিস্তানের সেই ছবি। শুধুমাত্র তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য পাকিস্তানে চালু হল প্রথম মাদ্রাসা।

রানি খান। ইসলামাবাদে নিজের দু’কামরার বাড়িতেই এই মাদ্রাসা চালু করেছেন তিনি। নিজেও একজন তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের সদস্য তিনি। মাত্র ২৫ জন শিক্ষার্থীকে নিয়েই প্রাথমিকভাবে শুরু হয়েছে মাদ্রাসার পঠন-পাঠন। কোরানের পাঠ দিচ্ছেন রানি নিজেই।

পাকিস্তানের অধিকাংশ পরিবারই তৃতীয় লিঙ্গের সন্তানদের গ্রহণ করে না। হয়তো জন্মের সময়ই রাস্তায় ফেলে রেখে আসা হয় তাঁদের। কিংবা বয়স খানিক বাড়লেই বেছে নিতে বলা হয় নিজের পথ। ফলে মূলত ভিক্ষাবৃত্তির ওপরেই ভরসা করে বেঁচে থাকতে হয় তাঁদের। অনেকে আবার পেট চালানোর দায়ে জড়িয়ে পড়েন অন্ধকার অপরাধ জগতে। তাঁদের উদ্ধার করে এনে জীবনের মূল স্রোতে ফেরানোর তাগিদেই শুরু হয়েছে এই মাদ্রাসা। এমনটাই জানাচ্ছেন রানি খান।

বয়স তখন মাত্র ১৩ বছর। রানি খান নিজেও বিতাড়িত হয়েছিলেন বাড়ি থেকে। বাধ্য হয়েছিলেন রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে বেড়াতে। পরে একটি তৃতীয় লিঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। গত ১৭ বছর ধরে সেখানেই কাজ করছেন তিনি। বিভিন্ন বিবাহ অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেই তাঁর পেট চলে। তাও সামান্য এই উপার্জন থেকে অর্থ জমিয়েই মহৎ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছেন তিনি। 

শুধু কোরানের পাঠই নয়। সেইসঙ্গে সেলাই-সহ বিভিন্ন হস্তশিল্পের কাজেরও প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। কারণ শুধুমাত্র তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হওয়ার জন্যই তাঁদের কোনো চাকরির সুযোগ থাকে না সরকারি কিংবা বেসরকারি সংস্থায়। তাই তাঁদের স্বনির্ভর করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন রানি।

তবে এই মাদ্রাসা কি সমগ্র পাকিস্তানের ছবিটা বদলে দিতে পারবে? না, একদিনে হয়তো পারবে না। তবে সে ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী তিনি।  ইসলামাবাদের পাশাপাশি এই ধরণের মডেল একদিন সারা পাকিস্তানেই ছড়িয়ে পড়বে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত রানি। 

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পাকিস্তানে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০,০০০। তবে বিভিন্ন ট্রান্স-রাইট সংগঠনের রেকর্ড বলছে, ২২ কোটির দেশে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ রয়েছে তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের। অর্থাৎ, অধিকাংশক্ষেত্রেই যেন তাঁদের অস্তিত্বকে গুরুত্ব দিচ্ছে না পাকিস্তান প্রশাসন। এই অব্যবস্থার বিরুদ্ধেও লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন রানি। তাঁর বিশ্বাস, একমাত্র শিক্ষাগ্রহণই পারবে নিজেদের অধিকার বুঝে নেওয়ার লড়াইতে তাঁদের সামিল করতে…

Powered by Froala Editor