ভার্জিন মেরির সঙ্গে রামধনু পতাকা; ধর্মীয় বিতর্কের ঊর্ধ্বে মানবতায় আস্থা আদালতের

পোল্যান্ডের সঙ্গে দীর্ঘ কয়েক শতক ধরে জড়িয়ে খ্রিস্ট ধর্মের বিস্তৃত ইতিহাস। এমনকি ‘ভার্জিন মেরির দেশ’ নামেও পরিচিত জার্মানির গা-ঘেঁষা ছোট্ট এই রাষ্ট্রটি। বছর দুয়েক আগের কথা, এই পোল্যান্ডেই ইস্টার চলাকালীন ছড়িয়ে পড়েছিল একটি পোস্টার। আর কুমারী মাতা মেরির সঙ্গে সেই পোস্টারে দৃষ্টি টেনেছিল রামধনু পতাকা। তুঙ্গে পৌঁছেছিল বিতর্ক। নির্মাতাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় আঘাতের মামলা চললেও, সম্প্রতি তাঁদের ক্লিনচিট দিল পোলিশ আদালত। ধর্মের উর্ধ্বে যেন জয় পেল মানবতাই।

২০১৯ সালে সেই ইস্টারে এক প্রদর্শনীতে সমলিঙ্গ এবং ‘এলজিবিটি’-কে পাপ হিসাবে দেগে দিয়েছিল একটি ধর্মীয় সংগঠন। তার প্রতিবাদেই পোল্যান্ডের তিন মহিলা এই পন্থা বেছে নিয়েছিলেন। শিল্পকর্মে ক্যাথলিক আইকনের ব্যবহারেই ফুটিয়ে তুলেছিলেন প্রতিবাদের ভাষা। সেই পোস্টার দেওয়ালে দেওয়ালে ছড়িয়ে পড়েছিল পোল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে।

শুরু থেকেই বিতর্কের কারণ হয়ে উঠেছিল পোস্টারটি। তবে সমস্যা বাঁধে প্লক শহরে। সেখানে পোস্টারটি লাগানোর সময় এলজিবিটি-সমাজকর্মীদের প্রথমে মৌখিক আক্রমণের শিকার হতে হয়। তারপর মামলা দায়ের হয় থানায়। মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে পোস্টার নির্মাতা তিন মহিলাকেই ভোগ করতে হত দু’বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। 

সে সময় সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন পোল্যান্ডের এক হেভি মেটাল ব্যান্ডের গায়িকা। শিল্পীদের জন্য আইনি প্রতিরক্ষা তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেন তিনি। বিগত দু’বছর ধরে সেই তহবিলের টাকাতেই চলেছে মামলা। সেইসঙ্গে দফায় দফায় চলেছে প্রতিবাদ মিছিল, জমায়েত। আর তারই সাফল্য মিলল শেষমেশ।

আরও পড়ুন
সমলিঙ্গ বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দিতে নারাজ কেন্দ্র, কী বলছেন বাংলার বিশিষ্টজনেরা?

প্রাথমিকভাবে পোল্যান্ডের বেশ কিছু রাজনীতিবিদ সমর্থন জানিয়েছিলেন অভিযোগে। এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জোয়াকিম ব্রুডজিনস্কিও প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন ‘স্বাধীনতা ও ‘সহনশীলতা’ ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাতের অধিকার দেয় না। তবে তাঁদের সামনে থেকেই জয় ছিনিয়ে নিলেন শিল্পীরা। আন্দোলনরত এলজিবিটিকর্মীরা।

বর্তমানে পোল্যান্ডে সমলিঙ্গ বিবাহ নিষিদ্ধ। সমলিঙ্গ দম্পতিদের সন্তান দত্তক নেওয়ার পদ্ধতিতেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। পোল্যান্ডের সমাজকর্মীদের পরবর্তী লক্ষ্য সেখানেও ‘রামধনু’ ফুল ফোটানো। পোল্যান্ডের এই অধিকারের লড়াইয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও। গত বছর পোল্যান্ডের ছ’টি শহরকে ‘এলজিবিটি-ফ্রি জোন’ হিসাবে ঘোষণা করে পোলিশ সরকার। আর তারপরেই এই ছ’টি শহর থেকে অর্থ বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিয়েছিল ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন…

আরও পড়ুন
সমলিঙ্গ বিবাহকে স্বীকৃতি গির্জার, নতুন যুগের সূচনা ফিদেল কাস্ত্রোর দেশে

Powered by Froala Editor

More From Author See More