বিজ্ঞাপনে সমকামিতার দৃশ্য, ২৬ হাজার বিরুদ্ধ পিটিশন সত্ত্বেও অনড় ক্যাডবেরি

একটাই চকোলেট। তাতে দু’দিক থেকে কামড় বসাচ্ছেন দু’জন একই লিঙ্গের মানুষ। জড়িয়ে যাচ্ছেন আবেগঘন চুম্বনে। মাস দেড়েক আগে চকোলেট ‘গোল্ডেন গোবিলি’-র পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছিল ক্যাডবেরি ডেয়ারি মিল্ক। আর তাতেই দেখা গিয়েছিল এমন ঘনিষ্ঠ একটি মুহূর্তের দৃশ্য। এবার সেই সমকামী চুম্বনের দৃশ্যের জন্যই রোষের মুখে পড়তে হল ডেয়ারি মিল্ককে। শতাব্দী-প্রাচীন চকোলেট কোম্পানির বিরুদ্ধে জমা পড়ল পিটিশনও।

বিজ্ঞাপনটি প্রকাশ্যে আসার ঠিক পরেই অভিযোগ তুলেছিল আমেরিকার একটি ধর্মীয় সংগঠন। এই বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে চলে প্রচারও। আর তারপরই আছড়ে পড়ে পিটিশনের ঢেউ। সব মিলিয়ে শুধু যুক্তরাষ্ট্র থেকেই জমা পড়েছে ২০ হাজারের বেশি পিটিশন বিশ্বব্যাপী সংখ্যাটা ছাড়িয়ে গেছে হাজার তিরিশেক। দাবি নিষিদ্ধ করতে হবে এই বিজ্ঞাপনকে। সেইসঙ্গে কয়েক হাজার মানুষ এই বিজ্ঞাপনে রিপোর্ট করেন ফেসবুকেও। মার্কিন সংস্থা ‘ওয়ান মিলিয়ন মমস’-এর অভিযোগ তরুণ প্রজন্মকে সমকামিতায় ‘প্ররোচনা’ যোগাচ্ছে ডেয়ারি মিল্ক। যা ‘ক্ষতিকর’ সমাজের পক্ষে। 

তবে এই অভিযোগের পরও নিজেদের অবস্থান বজায় রাখছে বার্মিংহামের চকোলেট প্রস্তুতকারক সংস্থাটি। পাশে দাঁড়িয়েছে ফেসবুক এবং গুগলও। সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এই বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে রিপোর্টগুলি। ক্যাডবেরি জানায়, যতদিন সমকামিতা বিতর্ক ও ঘৃণার বিষয় হয়ে থাকবে সমাজের কাছে ততদিন আরও প্রচার করা হবে এই দৃশ্য। এমনকি সার্চ ইঞ্জিনে ক্যাডবেরির অন্যান্য বিজ্ঞাপনগুলির পরিবর্তে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে এই ‘ক্ষতিকর’ ভিডিওটিকেই।

“আঠারোর শতকে বিধবা বিবাহ আইন পাশ করেছিলেন বিদ্যাসাগর। আজকে ২০২১-এ দাঁড়িয়ে সেই মানসিকতা কি সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে? সম্পূর্ণটা একটি ইউটোপিয়া। এখানেও তেমনই। তবে যেটা দেখার সেটা হল এই দ্বন্দ্বটা রয়েছে। সমকামিতার বিরুদ্ধে কণ্ঠ উঠলেও তাকে দমিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এবং এর মধ্যে দিয়েই একটা চেতনা তৈরি হচ্ছে। অনেক মানুষই পাশে দাঁড়াচ্ছেন এমন একটা বিজ্ঞাপনের। সেটাই তো সাফল্য”, বিজ্ঞাপনের প্রসঙ্গে প্রহরকে জানালেন কলকাতার অলাভজনক সংস্থা ‘প্রান্তকথা’-র প্রতিষ্ঠাতা বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন
সমকামী সম্পর্ক বৈধ, ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের পথে ভুটান

বিশ্বের প্রতিটা দেশেই ধীরে ধীরে উন্মুক্ত হচ্ছে বেড়াজাল। আইনত স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে সমকামিতাকে। কিন্তু তারপরও প্রথম বিশ্বের দেশ থেকে এই বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে উঠে আসা অভিযোগ সত্যিই অবাক করার মতোই। তবে শুধু ক্যাডবেরিই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানই আলোকপাত করছে বিভিন্ন সামাজিক বিতর্কিত বিষয়ে। ভেঙে ফেলছে প্রচলিত বদ্ধ-ধারণা কিংবা গোঁড়ামিকে। এক মুহূর্তে গোটা ছবিটা বদলে না গেলেও, এই ঘটনা পরিবর্তনের পথ দেখাচ্ছে বিশ্বকে। যা ইতিবাচক দিক বলেই মনে করছেন সমাজকর্মীরা…

আরও পড়ুন
সমকামীরাও ঈশ্বরের সন্তান : পোপ ফ্রান্সিস

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
সমকামিতার ‘অপরাধে’ অকথ্য নির্যাতন, মিশরের পুলিশের নিন্দায় সরব বিশ্ব