গাছে ‘পরিণতি’ পাবে মৃতদেহ! তৈরি হল জৈব কফিন

আমাজন হোক কিংবা দক্ষিণ এশিয়ার ক্রান্তীয় অরণ্য— গোটা বিশ্বজুড়েই ভয়াবহ ছবি বৃক্ষচ্ছেদনের। কিন্তু ক্রমবর্ধমান কাঠের চাহিদা না কমলে আদৌ কি আটকানো যাবে প্রকৃতির ওপর এই আগ্রাসন? না, তা সম্ভব নয় কোনোভাবেই। আর তাই কাঠের ব্যবহার কমাতে বিকল্পের সন্ধান দিলেন ডাচ উদ্ভাবক বব হেনড্রিক্স। তৈরি করে ফেললেন পরিবেশবান্ধব বায়ো-কফিন (Bio-Coffin)।

ইউরোপ তো বটেই, উত্তর এবং দক্ষিণ— দুই আমেরিকাতেই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য বহুলভাবে ব্যবহৃত হয় কাঠের কফিন। শুধুমাত্র কফিনের চাহিদা মেটাতেই প্রতি বছর কাটা পড়ে লক্ষ লক্ষ গাছ। পাশাপাশি সমাধিস্থ কফিনবন্দি মৃতদেহের বিয়োজন হতে সময় লাগে প্রায় ২০ বছর। ততদিনে কফিনের কাঠও আংশিকভাবে মিশে যায় মাটির সঙ্গে। ফলে, পুনর্ব্যবহারের সুযোগ থাকে না। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে বব হাতিয়ার করে নিয়েছেন ছত্রাককে।

ববের তৈরি ‘লিভিং কোকুন’-খ্যাত (Living Cocoon) জৈব-কফিনের মূল উপাদানই হল ছত্রাক। এই ধরনের কফিনের মধ্যেই বন্দোবস্ত করা থাকে ল্যাবরেটরিতে প্রস্তুত করা মাইসেলিয়াম ছত্রাক ও জৈব সারের বিছানা। যা মাত্র ছ’সপ্তাহের মধ্যেই সম্পূর্ণ বিয়োজন ঘটাবে মানবদেহের। সেইসঙ্গে কফিনের উপাদান হিসাবে কাঠের বদলে জৈব পদার্থ ব্যবহারের কারণে তাও সম্পূর্ণভাবে মিশে যাবে মাটির সঙ্গে। 

তবে শুধুমাত্র কাঠের ব্যবহার কমানোই নয়, এই কফিনের দৌলতে আয়ত্তে আসবে কার্বন নির্গমনের হারও। মাইসেলিয়াম ছত্রাক সাধারণত কার্বন সিঙ্কের মতো আচরণ করে। ফলে, দেহের বিয়োজনে তৈরি কার্বন পরিবেশে মেশার আগেই শোষণ করবে এই ছত্রাক। সমীক্ষা বলছে, বিয়োজনকে ত্বরান্বিত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ। যার মাধ্যমে পারদ, সিসা-সহ একাধিক ক্ষতিকর ধাতু মেশে মাটিতে। তাতে মাটির উর্বরতা যেমন কমে, তেমনই বৃদ্ধি পায় ভূগর্ভস্থ জলদূষণের সম্ভাবনাও। মাইসেলিয়ামের ব্যবহারে বন্ধ হবে দূষণের সেই সম্ভাবনাও।

আরও পড়ুন
বাঙালি গবেষকের নামে নামকরণ নব্যাবিষ্কৃত ছত্রাকের

তবে সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয় হল, ববের তৈরি বায়োকফিনের মধ্যেই রয়েছে বৃক্ষরোপণের স্বয়ংক্রিয় বন্দোবস্ত। হ্যাঁ, কফিনের মধ্যেই থাকবে গাছের বীজ। মাইসেলিয়ামের উপস্থিতিতে যা পরিণত হবে বৃক্ষে। প্রিয়জনের স্মৃতিচিহ্ন হিসাবেই যা বেঁচে থাকবে বছরের পর বছর। 

আরও পড়ুন
মশা মারতে ছত্রাক দাগা! অভিনব আবিষ্কার বাঙালি গবেষকের

শুরুতে জনপ্রিয়তা না পেলেও, সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানি, ব্রিটেন-সহ গোটা ইউরোপজুড়েই চাহিদা বেড়েছে ববের উদ্ভাবিত এই অভিনব জৈব কফিনের। লাফিয়ে বাড়ছে তার ব্যবহারও। এমনকি অনেকক্ষেত্রে নিজের কফিনেরও প্রি-বুকিং করে রাখছেন বহু ব্যক্তি। যা রীতিমতো অবাক করার বিষয়ই বটে। জৈব কফিনের এই ফ্যাসিনেশন যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে অনুপম রায়ের অতিপরিচিত গানের পঙক্তিকে। ‘এবার মরলে গাছ হব’। সত্যিই তো, কে না চিরসবুজ হয়ে থাকতে চায় মৃত্যুর পরেও…

আরও পড়ুন
ভাইরাসের পর এবার সংক্রমণ ঘাতক ছত্রাকের, সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চিকিৎসকরা

Powered by Froala Editor

Latest News See More