অন্ধকার আলো যোগাচ্ছে ছত্রাক! অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার জয়ন্তীয় পাহাড়ের কোলে

রাতের অন্ধকারে হঠাৎ বাতি নিভে গেলেও ভয় নেই। প্রকৃতির মধ্যেই রয়েছে জীবন্ত টর্চলাইট। আসলে একটি বিশেষ প্রজাতির ছত্রাক। দিনের বেলায় বাকিদের থেকে তাকে আলাদা করা কঠিন। তবে রাত হলেই তার শরীর জ্বলতে শুরু করে। মেঘালয়ের পাহাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই এই ছত্রাককে জীবন্ত টর্চলাইট হিসাবে ব্যবহার করে আসছেন। তবে পৃথিবীর তাবৎ বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা ছিল তার অস্তিত্ব। সম্প্রতি চিন ও ভারতের একদল ছত্রাক বিশেষজ্ঞের গবেষণাপত্রে এই ছত্রাকের উল্লেখ পাওয়া গেল। দেওয়া হল বিজ্ঞানসম্মত নামও। ভারতের বুকে প্রথম প্রজ্জ্বলক ছত্রাক হিসাবে বিজ্ঞান মহলে পরিচিতি পেল মেঘালয়ের এই প্রজাতিটি।

পরিবেশকর্মী ও বোটানিস্ট গৌতম বড়ুয়ার নেতৃত্বে চিন ও ভারতের একদল বিজ্ঞানী মেঘালয়ের পাহাড়ি অঞ্চলের ছত্রাকদের নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন। একের পর এক ছত্রাকের নমুনা সংগ্রহ করে অবাক হচ্ছিলেন তাঁরা। কী বিচিত্র তাদের চরিত্র! তবে অবাক হওয়ার আরও বাকি ছিল। একদিন বিজ্ঞানীদের ক্যাম্পে এসে হাজির একদল গ্রামবাসী। তাঁরা আশ্চর্য কিছু একটা দেখাতে চান। কিন্তু কী যে দেখাবেন, সে-কথা পরিষ্কার করে বলছেন না। তবে গবেষকরা শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন তাঁদের সঙ্গে যেতে। পশ্চিম জয়ন্তীয়া পাহাড়ে যখন পৌঁছলেন, তখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া হাঁটতে হচ্ছে বাঁশবনের গভীর অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে। তাই কয়েকজন গবেষক টর্চ জ্বালতেই গ্রামবাসীরা বাধা দিয়ে উঠলেন। রহস্য পরিষ্কার হল কিছুক্ষণের মধ্যেই। 

গবেষকরা অবাক হয়ে দেখলেন, বাঁশগাছের কাণ্ড থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসছে নিয়নের মতো উজ্জ্বল আলো।

গ্রামবাসীরা জানালেন, এই বাঁশগাছের কাণ্ড কেটে নেওয়ার পরেও বেশ কিছুদিন তার থেকে আলো বেরোয়। তবে গাছের গায়ের ছত্রাক ঝেড়ে ফেললে আলো থাকে না। সেখান থেকে বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করে চলল গবেষণাও। সারা পৃথিবীতে ১ লক্ষের বেশি ছত্রাক প্রজাতির মধ্যে মাত্র ১০০টি ছত্রাকের শরীর থেকে আলো বিচ্ছুরিত হয় বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। তবে তাদের থেকে এই ছত্রাকটি বেশ কিছু বিষয়ে আলাদা। এর শরীরের সম্পূর্ণ অংশ থেকে আলো নির্গত হয় না। কেবল দণ্ডাকার অংশটি উজ্জ্বল হয়ে থাকে। তাছাড়া, একই প্রজাতির ছত্রাক অন্য গাছের শরীরে বেঁচে থাকলেও একমাত্র বাঁশগাছের গায়ের ছত্রাক থেকেই আলো নির্গত হয়। এর জন্য বাঁশগাছের শরীরের মধ্যে থাকা কোনো পদার্থই দায়ী বলে মনে করছেন চাইনিজ অ্যাকাডেমির গবেষক সামন্ত করুণামূর্তি। ইতিমধ্যে চিত্রগ্রাহক স্টিভ অ্যাক্সফোর্ডের তোলা ছবি পাঠানো হয়েছে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটা উদ্ভিদ মিউজিয়ামে। এই নতুন প্রজাতির বিজ্ঞানসম্মত নাম রাখা হয়েছে রোরিডোমাইসেস ফাইলোক্যাকাইডিস। ভারতের প্রথম স্বীকৃতি পাওয়া প্রজ্জ্বলক ছত্রাক। অবশ্য পূর্বঘাট ও পশ্চিমঘাট পর্বতে এরকম আরও কিছু ছত্রাকের কথা জানা যায়। ভারতের নানা স্থানে ঘুরলে এমন অনেক নমুনা পাওয়া যাবে বলেই বিশ্বাস গবেষকদের।

আরও পড়ুন
পরিযায়ী পাখিদের মৃত্যু রুখতে অন্ধকারে ফিলাডেলফিয়া

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
অন্ধকারেও ‘উজ্জ্বল’ হাঙর, বৃহত্তমের হদিশ নিউজিল্যান্ডে