জোনাকির মতো আলো বিকিরণ করবে গাছ নিজেই, চমক গবেষকদের

শহরের কেন্দ্র থেকে একটু দূরে গ্রাম বা মফঃস্বলে বড় হয়ে ওঠা অনেকেরই। তাঁদের বেশিরভাগেরই ছোটোবেলার সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িয়ে লোর্ডশেডিং। সেইসব লোর্শেডিংয়ের সন্ধেগুলো ভরে থাকত জোনাকিতে। ছোট্ট ছোট্ট জোনাকির আলোয় ঝলমল করত আশেপাশের বাগান। সেই অপার্থিব সৌন্দর্য দেখলে একবার না একবার ইচ্ছে করবেই বাড়িতে এমন উজ্জ্বল বাগান তৈরির কথা। কিন্তু তা আদৌ কি সম্ভব? বিজ্ঞানের সাহায্যে তেমনটাই করে দেখালেন গবেষকরা।

আরও পড়ুন
বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কাটা হবে জঙ্গল, ৩ লক্ষ গাছের জীবন বিপন্ন অরুণাচলে

লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের একদল গবেষক ল্যাবরেটরিতে এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখালেন। কৃত্রিমভাবে তৈরি করলেন নতুন প্রজাতির গাছ। এই গাছ নিজেই আলো বিকিরণে সক্ষম। সবুজাভ আলোর ছটা বেরিয়ে আসতে দেখা যাবে এই উদ্ভিদের দেহাংশ থেকে। ডঃ ক্যারেন সারকিস্যান জানান, শুধুমাত্র ঘরের সৌন্দর্য বাড়াবে না এই গাছ। বরং ভবিষ্যতে একাধিক গবেষণায় দারুণভাবে সাহায্য করবে। আলোক বিকিরণে সক্ষম হওয়ায় বোঝা যাবে, বিভিন্ন উদ্ভিদ হরমোনের কার্যকারিতা, বিভিন্ন উদ্ভিদ কলার কাজ। গাছের কোনো অংশ আহত হলে প্রতিক্রিয়া কী হয়, সন্ধান পাওয়া যেতে পারে তারও।

আরও পড়ুন
ছিল ‘কার্ল মার্ক্স’, হয়ে গেল ‘জেনারেল শেরম্যান’, ২০০০ বছরের বুড়ো এক গাছের গপ্পো

বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই আলোক বিকিরণকে বলা হয় বায়োলুমিনেসেন্স। প্রাকৃতিকভাবে এই বৈশিষ্ট লক্ষ করা যায় একটি মাশরুমের মধ্যে। নিয়নোথোপ্যানাস নাম্বি নামের ওই ছত্রাকের ৪টি জিন তামাক গাছের ডিএনএ-তে প্রতিস্থাপন করেছিলেন ওই গবেষকরা। কৃত্রিম এই জিনই সাহায্য করে ক্যাফিক অ্যাসিডকে লুসিফারিনে পরিবর্তন করতে। লুসিফারিন নামক এই জৈব পদার্থের জন্যই আলো বিকিরণ করে ওই গাছটি। সম্প্রতি ‘নেচার বায়োটেকনোলজি’ পত্রিকায় প্রকাশ পাওয়া ওই বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্র থেকে জানা গেল এমনটাই।

আরও পড়ুন
বিশ্বের প্রাচীনতম মেহগনি গাছের ফসিল উদ্ধার, বয়স প্রায় ৮ কোটি বছর!

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দিন এবং রাত উভয় সময়েই আলো বিকিরণে সক্ষম এই উদ্ভিদ। অন্য অংশের থেকে এই গাছের ফুল বেশি উজ্জ্বল। তবে উদ্ভিদটির বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে আসে আলো বিকিরণের মাত্রা। ক্ষতিগ্রস্ত হলে উজ্জ্বলতা হারায় পাতা। ডঃ ক্যারেন জানান, এখানেই তাঁদের কাজ শেষ নয়। গবেষণা চালিয়ে যাবেন তাঁরা। অন্যান্য ছত্রাকের জিন প্রতিস্থাপন করে দেখবেন সম্ভাব্য ফলাফল।

আরও পড়ুন
করোনা-আতঙ্ক সর্বত্র, মন সতেজ রাখতে গাছ জড়িয়ে ধরছেন আইসল্যান্ডের মানুষরা

ইতিমধ্যেই ওই গবেষকরা ভাবছেন এই আবিষ্কার বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগানোর কথা। পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে এই বিষয়ের ওপর। এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ সতর্কতা নিতে চান ক্যারেন। এই বিকিরণ মানুষের ক্ষতির কারণ হতে পারে কিনা, খুঁটিয়ে দেখছেন তিনি। সঙ্গে চেষ্টা চলছে গাছের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর। কী ভাবছেন? সংগ্রহ করবেন এই গাছ? এমনটা পরিকল্পনা করতেই পারেন। ভাবতেই পারেন, ঝলমলে গাছে ব্যালকনি সাজানোর কথা। কারণ খুব তাড়াতাড়িই এই আবিষ্কার ছড়িয়ে পড়বে বাজারে। অদূর ভবিষ্যতে স্বপ্নরাজ্য হয়ে উঠবে পৃথিবী।

More From Author See More