দূরত্ববিধি, লকডাউন, মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবহার অনেকটাই গতি কমাতে পারে সংক্রমণের। কিন্তু মারণ ভাইরাসকে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য একমাত্র হাতিয়ার হতে পারে ভ্যাকসিনই। মহামারীর একদম সূচনালগ্ন থেকেই পরিষ্কার ছিল এই ছবিটা। আর তাই ভ্যাকসিন বানানোর কাজে ঝাঁপিয়েছিলেন বিশ্বের তাবড় গবেষক। তার মধ্যে বেশ কিছু ভ্যাকসিন অনুমোদনও পেয়েছে। তবে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্য একটি সমস্যা। বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন কেনার হিড়িক পড়ে গেলেও, নেই পর্যাপ্ত সিরিঞ্জের ব্যবস্থা। আর এই সংকট থেকেই বিশ্বকে উদ্ধারের অঙ্গীকার দিচ্ছে ভারতের একটি সংস্থা। হিন্দুস্থান সিরিঞ্জেস এন্ড মেদিক্যাল ডিভাইসেস।
ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে বদলে যায় সিরিঞ্জের ধরণও। আর সেই কারণেই বাজারে প্রাপ্ত যে কোনো সিরিঞ্জের মাধ্যমে সম্ভব হচ্ছে না কোভিডের টিকাকরণ। সিরিঞ্জের অভাবে টিকাকরণের গতি হ্রাস পেয়েছে, ইতিমধ্যেই জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। দেশের অভ্যন্তরে সিরিঞ্জ সংকটের কারণে রপ্তানি বন্ধ করেছে ব্রাজিলও। একই ছবি জাপানেও। মাস ঘুরলে কয়েক লক্ষ ডোজের ভ্যাকসিন স্রেফ ফেলে দিতে হবে সিরিঞ্জের অভাবে।
পৃথিবীর অন্যতম সিরিঞ্জ-প্রস্তুতকারক সংস্থা হিন্দুস্থান সিরিঞ্জেসের কাছে গত নভেম্বর মাসেই দ্বারস্থ হয়েছিল ইউনিসেফ। তখনও সংকট পৌঁছোয়নি এই পর্যায়ে। মেল করে আগাম জানানো হয়েছিল সিরিঞ্জের চাহিদার কথা। আর তার পরেই দ্রুত বিনিয়োগ বাড়ায় ভারতীয় কোম্পানিটি। যার পরিমাণ প্রায় দেড় কোটি মার্কিন ডলার। জার্মানি, ইতালি এবং জাপান থেকে অর্ডার দেওয়া হয় অত্যাধুনিক সিরিঞ্জ তৈরি করার যন্ত্রের। নিয়োগ করা হয় বাড়তি ৫০০ কর্মী।
বর্তমানে দিল্লি শহরের বাইরে ১১ একর জমির ওপর বানান সেই কারখানাই ভরসা যোগাচ্ছে সারা পৃথিবীকে। প্রতি মিনিটে সেখানে তৈরি হচ্ছে ৫৯০০ সংখ্যক সিরিঞ্জ। রবিবার ও অন্যান্য ছুটির দিনেও কাজ চলছে পুরোদমে। এই গতিতে এক বছরের মধ্যেই ২৫০ কোটি সিরিঞ্জ তৈরি করতে সক্ষম হবে হিন্দুস্থান সিরিঞ্জেস। তবে তাঁদের লক্ষ্য জুলাইয়ের মধ্যেই ৩০০ কোটি সিরিঞ্জের যোগান দেওয়া।
আরও পড়ুন
কমপক্ষে ১০ বছর স্থায়ী হবে মহামারী, করোনার নতুন স্ট্রেন নিয়ে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের
ইতিমধ্যেই জাপানে পাঠান হয়েছে দেড় কোটি সিরিঞ্জ। ভারতের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৪০ কোটি। ব্রাজিল এবং ইউনিসেফের জন্য বন্দোবস্ত করা হচ্ছে ২৪ কোটি সিরিঞ্জের।
তবে ইউনিসেফের সঙ্গে ভারতীয় এই সংস্থার সম্পর্ক বহু প্রাচীন। আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল-সহ বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলিতে সিরিঞ্জের সরবরাহকারী তারাই। ভ্যাকসিন হোক কি অন্য কোনো ওষুধের টিকা সবটাই রপ্তানি করে দিল্লির সংস্থাটি। প্রতি সিরিঞ্জ পিছু দাম পড়ে মাত্র ৩ সেন্ট, ভারতীয় মুদ্রায় মাত্র ২টাকা ২০ পয়সা। কোভিডের পাশাপাশি এই দেশগুলির জন্য বিশেষ সিরিঞ্জ তৈরির জন্যও আবেদন জানিয়েছে ইউনিসেফ। যা একবার ব্যবহারের পরেই ভেঙে ফেলা যায় সহজে। কারণ সংকটে দাঁড়িয়ে সিরিঞ্জের পুনর্ব্যবহারের প্রবণতা আকস্মিক বৃদ্ধি পেয়েছে এই দেশগুলিতে। এগোচ্ছে সেই কাজও।
আরও পড়ুন
বয়স ১১৭, করোনাকে হারিয়ে ফিরে এলেন ইউরোপের প্রবীণতম মানুষ
কিন্তু এই কাজে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠা না করে এগিয়ে এলেও, শঙ্কিত বিশ্বের এই ‘রক্ষাকর্তা’ সংস্থার কর্ণধার রাজীব নাথ। কারণ বিনিয়োগ যতই বেশি হোক না কেন এই ব্যবসায় লাভ থাকে নামমাত্র। মহামারীর এই রেশ কাটলেই হঠাৎ করে হ্রাস পাবে ইনজেকশন সিরিঞ্জের চাহিদা। আর তার ফলেই বড়ো-সড়ো ক্ষতির মুখে ঢলে পড়তে পারে সংস্থাটি। শুধু এক বছরের মধ্যে চাহিদা অর্ধেক হলেই ক্ষতি হবে প্রায় দেড় কোটির। তবে সেই হিসাব-নিকাশ করে তো এই কঠিন সময়ে পিছিয়ে আসা যায় না। তাই লড়াইটা দাঁতে দাঁত চেপেই লড়ে যাচ্ছেন তিনি…
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
করোনা প্রতিষেধক নিয়ে গবেষণা বাঙালি বিজ্ঞানীর, মার্কিন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র