সিমলিপালের ‘কালো বাঘ’-এর রহস্যভেদ

আজ থেকে প্রায় পাঁচ-ছ’ দশক আগের কথা। ওড়িশার (Odisha) ময়ূরভঞ্জ জেলার বাসিন্দারা এক অদ্ভুত দাবি সামনে এনেছিলেন। নিকটবর্তী সিমলিপাল (Simlipal Tiger Reserve) অরণ্যে নাকি দেখা গেছে, কালো রঙের বাঘ (Black Tiger)। তবে কি প্যান্থার খুঁজে পাওয়া গেল ওড়িশায়? এই প্রশ্নই উঠেছিল গবেষকদের মনে। কিন্তু তাঁদের বর্ণনা অনুযায়ী, সে প্রাণীর আয়তন একেবারেই মেলে না প্যান্থারের সঙ্গে। বরং, তার সঙ্গে মিলে যায় বাঘের চেহারাই। কিন্তু সত্যিই কি তবে কালো বাঘ হয়?

হ্যাঁ, হতে পারে। ধরুন, যদি বাঘের গায়ের কালো ডোরা কাটা দাগগুলিকেই বেশ খানিকটা চওড়া করে দেওয়া যায়? তাহলেই তার আড়ালে ঢাকা পড়ে যাবে হলুদ বর্ণ। ঠিক এমনটাই ঘটেছিল সিমলিপালে। তবে সেদিনের যে ঘটনা ছিল বিরল, আজ তা স্বাভাবিক হয়ে উঠছে ক্রমশ। হ্যাঁ, ওড়িশার এই অরণ্যের শার্দুলরা তাদের দেহের দাগ পাল্টে ফেলছে ক্রমশ। কিন্তু কারণ কী এই ঘটনার? সম্প্রতি, সেই রহস্যের সমাধান দিলেন গবেষকরা।

গবেষকরা এই বিশেষ ঘটনাটিকে চিহ্নিত করেছেন সিউডো-মেলানিস্টিক ঘটনা হিসাবে। মূলত, ট্রান্সমেমব্রেন অ্যামাইনোপেপটিডেস কিউ বা টাকপেপ নামের একটি বিশেষ জিনের অভিযোজন এই ঘটনার পিছনে দায়ী। এই জিনই কালো দাগের প্রস্থ বাড়িয়ে দেয়। মূলত সাধারণ বিড়াল এবং কিং চিতার দেহে এই বিবর্তিত জিনের অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়। তবে বাঘের ক্ষেত্রে এই জিনের উপস্থিতি এককথায় বিরল। সিমলিপালের বাইরে এই ধরনের ঘটনা প্রায় ঘটে না বললেই চলে। 

সিমলিপাল টাইগার রিজার্ভের পরিসংখ্যান শুনলে রীতিমতো ঘাবড়ে যেতে হয়। সেখানকার ৩৭ শতাংশ বাঘের দেহেই উপস্থিত এই বিশেষ জিন। কিন্তু মাত্র ৫ দশকের মধ্যেই কীভাবে হঠাৎ এতটা বৃদ্ধি পেলো সিউডোমেলানিস্টিক বাঘের সংখ্যা? এর পিছনে অনেকটা দায় রয়েছে মানুষেরই। বিগ ক্যাট পরিবারের সমস্ত প্রাণীদের বিচরণ ক্ষেত্র সাধারণত বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে থাকে। ফলত, এক রাজ্য থেকে কিংবা এক অরণ্য থেকে অনায়াসেই অন্য রাজ্যের অরণ্যে ঢুকে পড়ে বাঘেরা। ওড়িশার সিমলিপালের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই বললেই চলে। ক্রমশ সভ্যতার পরিধি বাড়তে বাড়তে সিমলিপালকে অন্যান্য অরণ্যের থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে মানুষ। ফলত, প্রজনন প্রক্রিয়ায় জেনেটিক বৈচিত্রের অভাব দেখা যাচ্ছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে একই ধরনের বিবর্তিত জিনের মাল্টিপ্লিকেশন প্রভাব বাড়িয়ে চলেছে সিউডোমেলানিস্টিক জিনের। যা নিঃসন্দেহে আশঙ্কার বিষয়। কিন্তু উপায় কী? এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর? গবেষকরা জানাচ্ছেন একমাত্র ইনব্রিডিং বন্ধ করলে ছেদ পড়তে পারে এই ঘটনায়। সেই প্রক্রিয়াও বেশ কঠিন। তবে মূল রহস্যের সমাধান খুঁজে পাওয়াই ছিল সেই কাজের প্রথম চ্যালেঞ্জ। এখন দেখার বাঘের ‘বৈচিত্র’ ফেরাতে পরবর্তীতে কী পদ্ধতি অবলম্বন করেন বিজ্ঞানীরা…

আরও পড়ুন
বাঘ ভাবতেন নিজেকে, বদলে ফেলেছিলেন চেহারাও!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবেও কমেনি সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা, উচ্ছ্বসিত পশুপ্রেমীরা