ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবেও কমেনি সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা, উচ্ছ্বসিত পশুপ্রেমীরা

আমফানের প্রভাব শেষ হতে-না-হতেই ইয়াসের মতো ঘূর্ণিঝড়। বিগত প্রায় দেড় বছর ধরে সুন্দরবনের ভাগ্য যেন সত্যিই অন্ধকার হয়ে এসেছে। তবে এর মধ্যেও রয়েছে সুখবর। সম্প্রতি, আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবসের ঠিক প্রাক্কালে রাজ্যের বনবিভাগ প্রকাশ করেছে সুন্দরবনের বাঘ সুমারির তথ্য। আর তাতেই দেখা গিয়েছে, একের পর এক তাণ্ডবের পরেও রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা কমেনি। গত বছর যে সংখ্যা ছিল ৯৬, এবছরেও তা ৯৬-তেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। শুধু তাই নয়, গত ৭ বছরে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২০টি।

“সুন্দরবনের প্রতিটি বাঘের নিরাপদ থাকার সমস্ত কৃতিত্ব বনবিভাগের কর্মচারীদেরই। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়া এটা কোনোদিনই সম্ভব হত না। আর তার সঙ্গে স্থানীয় মানুষদের সহযোগিতা পাওয়া গিয়েছে। এটাও একটা বড়ো বিষয়।” বলছিলেন বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ সংস্থা সোসাইটি ফর হেরিটেজ অ্যান্ড ইকোলজিক্যাল রিসার্চেস বা শের-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক জয়দীপ কুণ্ডু। বনবিভাগের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সালে সুন্দরবন অঞ্চলে বাঘের সংখ্যা ছিল ৭৬টি। তবে সফল সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রমশ সেই সংখ্যা বাড়িয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। ২০১৮ সালেই সংখ্যাটা ৮৮-তে পৌঁছয়।

গতবছর, অর্থাৎ ২০১৯-২০ সালের সুমারিতে দেখা যায় সুন্দরবন অঞ্চলে বাঘের সংখ্যা আরও খানিকটা বেড়েছে। অথচ পরিসংখ্যান প্রকাশের কিছুদিন আগেই আমফানের তাণ্ডব বয়ে গিয়েছে গোটা অঞ্চলের উপর দিয়ে। এবছর এসেছে ইয়াসের দাপট। কিন্তু পরপর দুবছর সংখ্যাটা ৯৬-তেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। এর মধ্যে ৭৪টি বাঘ রয়েছে সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের মধ্যে। এবং ২২টি ছড়িয়ে রয়েছে বাদাবনের অন্যান্য অঞ্চলে। “আসলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা মূলত মানুষের বসতি অঞ্চলেই হয়েছে। বাদাবন অঞ্চল প্রায় নিরাপদেই রয়েছে। বাঘের কোনো ক্ষতি না হওয়া সেটাই প্রমাণ করল আবার।” জানালেন জয়দীপবাবু। তাঁর মতে, “এই ঘটনাই আরও বেশি করে প্রমাণ করে, বাদাবনকে রক্ষা করা এই মুহূর্তে কতটা প্রয়োজন। শুধু বাঘের জন্য নয়, মানুষের বসতিকেও রক্ষা করতে পারে বাদাবনই।”

বাংলার গর্ব রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। অথচ চোরাশিকার এবং বাদাবন ধ্বংসের কবলে তার অস্তিত্বই হারিয়ে যেতে বসেছিল। বনকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম সেই জায়গা থেকে আবারও ফিরিয়ে আনল বাঘেদের। এরপর এটুকু বলাই যায়, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার এখনই বিলুপ্তর পথে এগিয়ে যাচ্ছে না। বরং আরও বেশ কয়েক বছর পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষীপ্র বাঘের এই প্রজাতিটিকে নিয়ে গর্ব করতে পারে সুন্দরবন সহ সারা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ।

আরও পড়ুন
সুন্দরবনে নতুন অঙ্গুরিমাল প্রাণী আবিষ্কার প্রেসিডেন্সির গবেষকদের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ইয়াস-বিপর্যয়ের মধ্যেই আগামী ঘূর্ণিঝড়ের চিন্তা, সমাধান অজানা সুন্দরবনবাসীদের