বিলুপ্তপ্রায় বাঘরোলের জন্য পৃথক জলাশয় আলিপুর চিড়িয়াখানায়

খাঁচার মধ্যে বন্দি নয়, আলিপুর চিড়িয়াখানার মধ্যেই এবার তৈরি হতে চলেছে বিকল্প বাস্তুতন্ত্র। বাঘরোলের প্রজনন ঘটানোর জন্যই বিশেষ জলাশয় তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। বাংলার বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে জড়িয়ে রয়েছে বাঘরোল। কিন্তু ক্রমশ পরিবেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাণীটি। এমনকি আইইউসিএন কর্তৃক বিপন্ন প্রাণীর তালিকাতেও স্থান দেওয়া হয়েছে প্রাণীটিকে।

বাঘরোল দেখতে অনেকটা বাঘের মতোই। ফলে অনেক সময় গ্রামবাসীরা ভয় পেয়ে মেরে ফেলেন এই প্রাণীটিকে। অথচ বাঘরোল মানুষ তো দূরের কথা, গরু-ছাগল বা অন্য কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণীকেও আক্রমণ করে না। বাঘরোলের খাদ্য হল মাছ। গ্রামবাংলার জলাশয়ে মাছের জন্য ওঁত পেতে বসে থাকে বলে একে মেছো বিড়াল বলেও ডাকেন অনেকে। এছাড়াও কাঁকড়া, শামুক, ব্যাঙ প্রভৃতি প্রাণীও বাঘরোলের খাদ্য।

একসময় বাংলার গ্রামে গ্রামে দেখতে পাওয়া যেত বাঘরোল। কিন্তু আজ তার অস্তিত্ব প্রায় খুঁজেই পাওয়া যায় না। বাঘরোল সংরক্ষণের বিষয়ে সরকারি স্তরেও নানা প্রকল্প নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। একে রাজ্যের সরকারি পশু হিসাবেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের উদ্যোগেই আলিপুর চিড়িয়াখানায় এই জলাশয় তৈরি হয়েছে। এই মুহূর্তে আলিপুর চিড়িয়াখানায় ১২টি বাঘরোল রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি পুরুষ ও ৩টি স্ত্রী বাঘরোলকে প্রজনন প্রকল্পের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। খাঁচা থেকে সরিয়ে এদেরকে জলাশয়ে স্থানান্তরিত করা হবে।

চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিষকুমার সামন্ত জানিয়েছেন, বাঘরোল সাধারণত ঝোপেঝাড়ে থাকে। তাই তাদের জন্য আলাদা ধরণের বাস্তুতন্ত্রও গড়ে তোলা হয়েছে। আপাতত যে সমস্ত শাবকের জন্ম হবে, তারা চিড়িয়াখানার মধ্যেই থাকবে। পরিণত বয়সে পৌঁছলে তাদের নিজস্ব বাসস্থানে ছেড়ে দেওয়া হবে। পূর্ব কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং হাওড়া অঞ্চলের বেশ কিছু জলাশয়ে এখনও বাঘরোলের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে তাদের স্বাভাবিক প্রজননের হার যথেষ্ট কমে এসেছে। কৃত্রিম প্রজননই তাই এই মুহূর্তে একমাত্র রাস্তা। বাংলার বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত বাঘরোল। এই প্রকল্প যে তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে, তেমনটাই মনে করছেন সকলে।

আরও পড়ুন
চিকিৎসাবিজ্ঞানের স্বার্থেই প্রয়োজন ভাষার সংরক্ষণ, মত বিজ্ঞানীদের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
অবশেষে আফগান ইতিহাস সংরক্ষণে উদ্যোগী তালিবানরা!