অসমে সরকারি চাকরির আবেদনপত্রে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ বিভাগ; কেন পিছিয়ে বাংলা?

মাস কয়েক আগেই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অসম পাবলিক সার্ভিস কমিশন। রাজ্য নাগরিক ও মিত্র পরিষেবা পরীক্ষার আবেদনপত্রে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য বিশেষ বিভাগ সংযুক্ত করেছিল অসম। সংশ্লিষ্ট পরীক্ষায় তৃতীয় লিঙ্গের বিভাগে জমা পড়েছে ৪২টি আবেদন। সম্প্রতি এমনটাই জানালেন অসম পিএসসি’র এক আধিকারিক।

ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের নিয়োগে লিঙ্গ বিভাগে ইতিমধ্যেই চালু করা হয়েছিল তৃতীয় লিঙ্গের বিকল্প। তবে রাজ্য কমিশনের ক্ষেত্রে অসমের এই উদ্যোগ সারা দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম। গত ২৫ অক্টোবর এই পরীক্ষার আবেদনের শেষ দিন ছিল। সব মিলিয়ে জমা পড়েছে ৮৩ হাজারের কিছু বেশি আবেদনপত্র।

মোট আবেদনকারীর সাপেক্ষে ৪২ সংখ্যাটি নগণ্য হলেও, যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এমনটাই মনে করছেন অসমের এলজিবিটি কল্যাণ বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান স্বতি বিধান বড়ুয়া। রাজ্যের সাম্প্রদায়িক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে তৃতীয়লিঙ্গের মানুষরা বেড়াজাল ভেঙে এগিয়ে আসতে পারবেন বলেই আশাবাদী তিনি। 

“এটাকে একটা অ্যাচিভমেন্টই বলব। প্রত্যেক রাজ্যেরই একটা নিজস্ব অ্যাচিভমেন্ট আছে। পশ্চিমবঙ্গেও এই ধরণের কাজ করা যেত। কারণ বহু আগে থেকেই পশ্চিমবঙ্গে এই ধরণের সচেতনতা ছিল, দাবি উঠে এসেছিল। তবে সেই কাজটা করে উঠতে পারেনি। অসম সেই সাফল্যটা পেয়েছে। তবে শুধু অসম নয়, বরং ভারতের সমস্ত রাজ্যের ক্ষেত্রেই এমনটা হওয়া উচিত। আশা করা যায় অন্য রাজ্যগুলিও এমন উদ্যোগ নেবে”, বললেন অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্রান্সজেন্ডার এন্ড হিজরা ইন বেঙ্গলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যা রঞ্জিতা সিনহা।

বাংলাতে এই ধরণের প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষায় লিঙ্গ নির্ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষ, নারীর পাশাপাশি ‘অন্যান্য’ (আদার্স) বিকল্প থাকে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায় পরিচয়পত্রে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’-এর মর্যাদা পাওয়ার পরও, এই শব্দবন্ধে কেন আপত্তি কমিশনের? রঞ্জিতা সিনহা এই প্রসঙ্গে জানান, “রাজ্যে ট্রান্সজেন্ডার ডেভলপমেন্ট বোর্ড রয়েছে। আদার্স বললে যে তাতে শুধু ট্রান্সজেন্ডার বোঝানো হয় না, সেটা সকলেরই জানা। সেখানে আদার্সের জায়গায় ট্রান্সজেন্ডার কথাটা ব্যবহৃত হলে বেশি সংবেদনশীল হওয়া হয়। দ্বিতীয়ত শিক্ষা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি রাজ্যই এগিয়ে যাচ্ছে এই বিষয়ে। তবে এলজিবিটি আন্দোলনে শুরু থেকে এগিয়ে থেকেও বাংলার ট্রান্সজেন্ডার বোর্ড প্রায় অচল। শুধু রেশন বা কিছু সুবিধা দিলেই কি একটা কমিউনিটি এগিয়ে যাবে? শিক্ষার ক্ষেত্রে সেই উদারমনস্কতাটা প্রথমে আনা দরকার বাংলায়। ট্রান্সজেন্ডার ডেভলপমেন্ট বোর্ডেও প্রধান কর্মকর্তা হিসাবে নিযুক্ত করা দরকার তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিকে।”

কিছুদিন আগেই দিল্লিতে চালু হয়েছে সম্পূর্ণভাবে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের দ্বারা চালিত মেট্রো স্টেশন। জীবিকার ক্ষেত্রেও এই ধরণের উদ্যোগে পিছিয়ে রয়েছে বাংলা। অসম কিংবা দিল্লি সেই আলোর সন্ধান দিতে পেরেছে। তবে বাংলার তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের মানুষরা সেই সুযোগ বা সম্মান ঠিক কবে পাবেন, তা আজও অজানা...

আরও পড়ুন
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের বড়ো প্রাপ্তি; পরিচয় পেতে আর বাধ্যতামূলক নয় মেডিক্যাল পরীক্ষা

Powered by Froala Editor