বন্যপ্রাণীদের আইনি অধিকার, অভিনব পদক্ষেপ ইকুয়েডরের

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলেছে বন্যপ্রাণীদের ওপর মানুষের আগ্রাসন। একদিকে যেমন বনভূমি ধ্বংসের ফলে ক্রমশ বাসস্থান হারাচ্ছে তারা, তেমনই প্রতিনিয়ত মানুষের নির্যাতন কিংবা হিংসারও শিকার হচ্ছে বন্যপ্রাণীরা। বন্যপ্রাণীদের সুরক্ষার জন্য আইন আছে বটে, কিন্তু আদৌ তা কতটা কার্যকরী? এবার এই ঘটনাবলির রেশ টানতেই অভিনব পদক্ষেপ নিল ইকুয়েডর (Ecuador) প্রশাসন। পৃথিবীর প্রথম দেশ হিসাবে ঠিক মানুষের মতোই আইনি মৌলিক অধিকার (Rights) প্রদান করল বন্যপ্রাণীদের (Wild Animals)। 

শুধু হিংস্রতা বা নির্যাতনই নয়, অনেক সময় অজান্তেই বন্যপ্রাণীর মৌলিক অধিকার খর্ব করে থাকি আমরা। উদাহরণস্বরূপ ধরে নেওয়া যেতে পারে, বিরল বন্যপ্রাণী পোষা। তাদের মূল বাসভূমি থেকে সরিয়ে নিয়ে আসাটাও তো একপ্রকার তাদের অধিকার খর্ব করাই। ঠিক এই প্রসঙ্গ ধরেই বিতর্কিত এক ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ইকুয়েডরে। 

সেটা ২০১৯ সাল। বন্যপ্রাণী পোষার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইকুয়েডর প্রশাসন। নাগরিকদের থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয় সমস্ত সরীসৃপ, এপ এবং ফেলাইন গোত্রের বন্যপ্রাণী। ঠিক সেভাবেই এক ইকুয়েডরিয়ান লাইব্রেরিয়ান অ্যানা বিয়াট্রিজের থেকে বন্দি করা হয়েছিল একটি বিলুপ্তপ্রায় বানরকে। তারপর তাকে স্থানান্তরিত করা হয় স্থানীয় চিড়িয়াখানায়। তবে অ্যানাকে ছেড়ে খুব বেশিদিন বাঁচতে পারেনি বানরটি। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রাণ হারায় সে। 

এই ঘটনার পরেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অ্যানা। মামলা করেছিলেন খোদ প্রশাসনের বিরুদ্ধে। মামলা গড়িয়েছিল দেশের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত সেই মামলার প্রেক্ষিতেই বন্যপ্রাণীদের এই নতুন আইনি অধিকার প্রদান করে ইকুয়েডরের সর্বোচ্চ আদালত। বদল আনা হচ্ছে দেশের সংবিধানেও। 

আরও পড়ুন
ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি – হুজুগ, নিষ্ঠা ও কিছু বিপন্ন বন্যপ্রাণের গপ্পো

তবে মজার বিষয় হল, প্রশাসনের বিরুদ্ধেই সেই মামলার রায় গেলেও, ছাড় পাননি অ্যানাও। অরণ্য থেকে তাঁর পোষ্য বানরটিকে মাত্র ১ মাস বয়সে তার বাবা-মায়ের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আসাকেও অধিকার খর্বের আওতাতেই ফেলেছে সুপ্রিম কোর্ট। 

আরও পড়ুন
বন্যপ্রাণীদের জল পৌঁছে দিতে প্রতিদিন ৭০ কিলোমিটার পাড়ি প্যাট্রিকের

ইকুয়েডরে এর আগেও ছিল ‘প্রকৃতির অধিকার’ আইন। এবার প্রাণীদের আইনি অধিকার দিয়ে সেই শাসনব্যবস্থাকেই আরও শক্ত করল ইকুয়েডর। প্রাচীন জনজাতি গোষ্ঠীদের জন্য ঠিক যেভাবে অরণ্যের অধিকার সংরক্ষিত হয়, ঠিক সেভাবেই কাজ করবে এই নতুন প্রাণী অধিকার আইন। বনদপ্তরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করবে পরিবেশমন্ত্রক এবং শাসন ব্যবস্থা। বন্যপ্রাণী ধরা, পাচার কিংবা পোষা— সবই এই আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মানুষের মতো বন্যপ্রাণীরা অভিযোগ দায়ের করার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে না ঠিকই, তবে এই আইন প্রণয়নে নীরবেই তাদের জয় এল, তাতে সন্দেহ কোনো…

Powered by Froala Editor