জনসংখ্যা মাত্র ৩০০, স্বাধীনতার দাবিতে লড়ছে ইতালির ছোট্ট গ্রাম

ইতালির লিগুরিয়ান রিভেরা পাহাড়ের গা-ঘেঁষা ছোট্ট একটি গ্রাম। ছবির মতো সাজানো দৃশ্য চারিদিকে। সেবোরজা নামের এই গ্রামের জনসংখ্যা মেরে কেটে তিনশো জন। আয়তন মাত্র পাঁচ বর্গ মাইল। তবে সেবোরজার মাটিতে পা দিলেই বোঝা যাবে আর পাঁচটা সাধারণ গ্রামের থেকে বেশ আলাদা এই গ্রাম। গ্রামে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়বে বর্ডার ক্রসিং, সুসজ্জিত প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘সেনা’-দের। তাছাড়া ভিন্ন পতাকাও নজরে পড়তে বাধ্য।

হ্যাঁ, ঠিকই। এই পতাকা ইতালির নয়। এই পতাকা শুধুমাত্র সেবোরজার। আদতে ইতালির অংশ হলেও, স্বাধীন ও স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের তকমা পেতেই এভাবে লড়াই করে চলেছে সেবোরজা। আর এই লড়াই আজকের নয়। দীর্ঘ ছয়-সাত দশক থেকেই ইতালি এবং ইউরোপের আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির কাছে দাবি জানিয়ে আসছে সেবোরজা। 

ছোট্ট এই মনোরম গ্রামটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং বৈচিত্রও। পঞ্চম শতকেরও আগে তৈরি হয়েছিল এই গ্রাম। নথি অনুযায়ী ৯৫৪ সালে বেনেডিক্টাইন সন্ন্যাসীদের এই গ্রাম দান করেন মধ্যযুগীয় এক রাজা। অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত তাঁদের ক্ষমতাতেই ছিল এই গ্রাম। ১৭২৯ সালে সার্ডিনিয়া রাজ্যেরও কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয় সেবোরজাকে। পরে যা ইতালির অংশ হয়ে ওঠে। তবে ছোট্ট এই প্রদেশের ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো নথি বা লিখিত রেকর্ডই নেই ইতালির কাছে। ফলে, স্পষ্টতই উঠে আসে অধিগ্রহণের প্রসঙ্গও। 

এর ভিত্তিতেই দীর্ঘ কয়েক দশক ধরেই স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদাপ্রাপ্তির দাবি জানিয়ে আসছে সেবোরজা। তবে ১৯৬০-এর দশকে সম্পূর্ণ ভিন্ন মোড় নেয় সেবোরজার পরিস্থিতি। স্বঘোষিত রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ ইতালির ছোট্ট এই গ্রাম। রাজার আসনে বসেন সেবোরজার প্রথম ‘প্রিন্স’ জর্জিও কারবোনে। তারপর থেকেই সেবোরজায় চলে আসছে রাজতন্ত্র। রয়েছে পৃথক স্থানীয় মুদ্রা, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত এমনকি পাসপোর্টও। 

তবে মজার ব্যাপার হল, সেবোরজার রাজতন্ত্রও বেশ বৈচিত্রময়। বংশানুক্রমিকভাবে কোনো রাজপরিবারই নেই সেখানে। মসনদে বসার জন্য ভোটে দাঁড়াতে পারেন যে কেউ। সাত বছর ছাড়া ছাড়াই হয় নির্বাচন। তারপর গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই নির্বাচিত হয় রাষ্ট্রের শাসক। এই রীতি মেনেই ২০১৯ সালে সেরবোরজার সিংহাসনে বসেন প্রথম রাজকুমারী নিনা। আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির থেকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সেইসঙ্গে সেবোরজাকে করে তুলেছেন ইতালির অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র। তাঁর নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে অর্থনীতিও। এখন দেখার আদৌ তাঁর এই দাবিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন স্বীকৃতি জানায় কিনা…

Powered by Froala Editor