আজও পৃথিবীর নানা প্রান্তে ভূতের ভয়ে আতঙ্কিত মানুষ। তবে মৃত ব্যক্তিদের কি শুধুই অপকারী হিসাবে দেখা হয়? পৃথিবীর নানা প্রান্তের তথ্য ঘাঁটলে অবশ্য বিপরীত নমুনাও কম চোখে পড়বে না। মৃত ব্যক্তিদের সেখানে অতিমানবিক শক্তির অধিকারী হিসাবে কল্পনা করা হলেও তাঁদের দেখা হয় জীবিত মানুষের বন্ধু হিসাবেই। বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকায় কলম্বিয়া সহ বিভিন্ন দেশে এই বিশ্বাস এখনও প্রবল। আর তার অন্যতম নমুনা পাওয়া যায় কলম্বিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে সান আগাস্টিন প্রত্নক্ষেত্রে।
ঠিক কবে, কারা এই সমাধিক্ষেত্র রচনা করেছেন; সেটা অবশ্য বেশ বিতর্কের বিষয়। তবে মনে করা হয় প্রথম থেকে অষ্টম শতকের মধ্যে কোনো অরণ্যবাসী উপজাতি এই সমাধিক্ষেত্র তৈরি করেছেন। সমগ্র এলাকায় এখনও পর্যন্ত ৫০০টির বেশি সমাধি পাওয়া গিয়েছে। আর প্রতিটি সমাধিকে ঘিরে রয়েছে পাথর কেটে বানানো নানা ধরনের মূর্তি। কোনোটা বানরের, কোনোটা শিম্পাঞ্জির। এমনকি সাপ, হাতি এবং গণ্ডারের মূর্তিও পাওয়া গিয়েছে। তবে ঠিক কী কারণে এই রীতি, সে-বিষয়ে একমত নন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
অধিকাংশ গবেষক অবশ্য মনে করেন, উপজাতির মানুষের ধারণা ছিল মৃত্যুর পর এইসব প্রাণীর ক্ষমতা মানুষের আত্মার নিয়ন্ত্রণে আসে। আর সেই বিশ্বাসকেই তাঁরা এভাবে মূর্তির চেহারায় ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে ঠিক কোন উপজাতির মানুষ এখানে বাস করতেন, সে-বিষয়ে এখনও স্পষ্ট ধারণা নেই। মনে করা হয় খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে কোনো অরণ্যবাসী উপজাতি এখানে বসবাস শুরু করেন। আশেপাশে কৃষিকাজের কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি। ফলে কৃষিকাজ তাঁরা জানতেন না বলেই মনে করা হয়। আর এই কারণেই প্রকৃতির সঙ্গে যোগসূত্র ছিল আরও নিবিড়। মোটামুটি ত্রয়োদশ শতক নাগাদ এইসব উপজাতি হারিয়ে যেতে শুরু করে। যদিও ল্যাটিন আমেরিকার অনেক জনজাতিই এখনও মনে করে, মৃত্যুর পর মানুষের আত্মা অতিমানবিক ক্ষমতার অধিকারী হয়। আর সেইসব আত্মা কিন্তু মানুষের বন্ধু হিসাবেই কাজ করে।
Powered by Froala Editor