বিলাসবহুল রেস্তোরাঁই হোক কিংবা ধাবা— লং-রাইডে দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা যাত্রার পরেই পেটপুজোর জন্য থামতে হয় আমাদের। তবে আজ থেকে কয়েকশো বছর আগে ধাবা কিংবা রেস্তোরাঁ— এর কোনোটাই ছিল না সেভাবে। তখন পথের ধারের সরাইখানাই ছিল যাত্রীদের বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা। সেখানেই থাকত পানাহারের জায়গা। বিশেষত বণিকদের কথা ভেবে বাণিজ্যপথের নির্দিষ্ট দূরত্বের ব্যবধানে এইধরনের সরাইখানা তৈরি করতেন প্রাচীন সম্রাটরা। এবার ইংল্যান্ডের (England) হার্টফোর্ডশায়ারে সন্ধান মিলল এমনই একটি প্রাচীন ‘সার্ভিস স্টেশন’-এর (Service Station)। না, ব্রিটিশরা নয়। এই সরাইখানা নির্মাণ করেছিলেন রোমানরা (Romans)।
সম্প্রতি অক্সফোর্ড আর্কিওলজি প্রোজেক্টের (Oxford Archaeology Project) গবেষকদের সৌজন্যে প্রকাশ্যে এল এই ঐতিহাসিক প্রত্নক্ষেত্রটি। যদিও এই প্রত্নক্ষেত্রের আবিষ্কার আকস্মিকভাবেই। স্টর্ট নদী তীরবর্তী অঞ্চলটিতে ফুটবল স্টেডিয়াম তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল মাস কয়েক আগে। স্টেডিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য শুরু হয়েছিল খননকার্য। মাটি খুঁড়তেই উঠে আসে বহু প্রাচীন প্রত্নসামগ্রী। কাজ বন্ধ করে, বিষয়টি তখনই জানানো হয়েছিল অক্সফোর্ড আর্কিওলজি এবং ব্রিটিশ প্রশাসনকে।
ওক্সফোর্ড গবেষকদের অভিমত, স্টর্টফোর্ডের এই সরাইখানা তৈরি হয়েছিল মূলত রোমান বণিকদের জন্যই। বিশ্রামাগার ছাড়াও সেখানে ছিল কামারের দোকান, সেনা ব্যারাক এবং মন্দির। রোমান মুদ্রা, মাটি এবং ধাতুর তৈরি পাত্র, নানান যুদ্ধাস্ত্র-সহ একাধিক সামগ্রী পাওয়া গেছে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলটিতে। প্রত্নক্ষেত্রটি থেকে খুঁজে পাওয়া বেশ কিছু মুদ্রায় রয়েছে সম্রাট নিরোর ছবিও। ফলে, গবেষকদের অনুমান খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীরও আগে থেকে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলটি সার্ভিস সেন্টার হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আর তার অন্যতম কারণ স্টর্টফোর্ডের ভৌগলিক অবস্থান।
কোলচেস্টার এবং সেন্ট অ্যালবানস— এই দুই অঞ্চলেই তৎকালীন সময়ে রোমান বসতি ছিল। আর এই দুই শহরের সংযোগকারী পথের ঠিক মাঝখানেই অবস্থিত স্টর্টফোর্ড। পাশাপাশি সরাইখানার পাশে স্টর্ট নদীর উপস্থিতিও বেশ লাভজনক ছিল বণিকদের পক্ষে। ভারি পণ্যের আমদানি-রপ্তানি চলত জলপথে। গবেষকদের অনুমান বেশ বড়ো অঙ্কেরই লেনদেন হত এই পথে। আর সেই কারণেই সামরিক নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করেছিল তৎকালীন রোমান প্রশাসন।
আরও পড়ুন
যিশু নন, বড়োদিনে জন্মেছিলেন সূর্যদেব— এমনটাই বিশ্বাস ছিল প্রাচীন রোমানদের
আনুমানিক প্রথম শতাব্দী পর্যন্ত বেশ রমরম করেই চলেছে এই রোমান সার্ভিস স্টেশন। তারপর সময়ের আবহে অস্তিত্ব হারিয়ে যায় তার। এই একই অঞ্চলে সন্ধান মিলেছে তৃতীয় ও চতুর্থ শতাব্দীর একটি সমাধিক্ষেত্রেরও। এখনও পর্যন্ত মোট ৮৭টি সমাধি খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। সেখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে তৃতীয় বা চতুর্থ শতাব্দীতে বাণিজ্যকেন্দ্রের তকমা হারায় অঞ্চলটি। ততদিনে গড়ে উঠেছিল জনবসতি।
আরও পড়ুন
রোমান সাম্রাজ্য ও অজস্র যুদ্ধের কাহিনি নিয়ে ধুঁকছে স্পেনের তরবারি শিল্প
ইংল্যান্ডের বুকে রোমানদের এই আদি ঘাঁটি রীতিমতো অবাক করার মতোই এক আবিষ্কার। চলছে সংশ্লিষ্ট অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত প্রত্নসামগ্রীর বিশ্লেষণ ও পরীক্ষা। আরও নানান রহস্য উঠে আসতে পারে তা থেকে, সে ব্যাপারে আশাবাদী অক্সফোর্ডের প্রত্নতাত্ত্বিকরা…
আরও পড়ুন
উদ্ধার রোমান পানপাত্র, গুপ্তযুগের মুদ্রা; নদীয়ার দেবলগড়ের ইতিহাস সংরক্ষণ বিশ্বজিৎ রায়ের
Powered by Froala Editor