যিশু নন, বড়োদিনে জন্মেছিলেন সূর্যদেব— এমনটাই বিশ্বাস ছিল প্রাচীন রোমানদের

২৫ ডিসেম্বর যিশুর জন্মদিন নয়। হ্যাঁ, এই নিয়ে একসময় গোটা ইউরোপজুড়ে চলত বিরাট বিতর্ক। এমনকি বড়োদিন পালন করার অপরাধে শাস্তির ব্যবস্থাও ছিল নানা দেশে। তাহলে বড়োদিনের উদযাপন শুরু হল কীভাবে, তাই নিয়ে নানা মুনির নানা মত। অনেকের মতে রোমের প্রাচীন পেগান ধর্মের মধ্যে রয়েছে বড়োদিনের বীজ। আবার অন্য একটি মতও রয়েছে। যেখানে ইউরোপের ইতিহাসের সঙ্গে মিলেমিশে যায় ভারতবর্ষও। রোমের ধর্মীয় ইতিহাসের (Roman Mythology) সঙ্গে মিলে যায় পার্সি এবং হিন্দু ধর্মের ইতিহাসও। বলা যায়, ২৫ ডিসেম্বর যীশু খ্রিস্টের নয়, বরং সূর্যের দেবতা মিত্রের (Mithra, The God Of Sun) জন্মদিন।

সূর্য পূজার ইতিহাস পৃথিবীর প্রতিটা দেশেই রয়েছে। অন্যতম প্রাচীন দেবতাদের একজন সূর্য। আর পার্সিদের মধ্যে সূর্যদেব মিত্রর পূজা প্রায় ৪ হাজার বছর প্রাচীন। শুধু পার্সিদের বললে অবশ্য একটু ভুল হবে। বৈদিক সাহিত্যেও সূর্যকে মিত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে বহুবার। এমনকি অগ্রহায়ণ মাসে গ্রাম বাংলায় যে ইতু পুজো হয়, সেই ইতু শব্দটিও এসেছে মিত্র থেকেই। থাক সেসব কথা। পার্সি ধর্ম এবং হিন্দু ধর্মের সম্পর্কের কথা বলতে গেলে নানা কথাই বলা যায়। কিন্তু তার চেয়েও বেশি যেটা অবাক করে, শুধু প্রাচ্যেই নয়, বরং পাশ্চাত্যেও সমান জনপ্রিয় ছিলেন সূর্যদেব মিত্র। প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যে মিত্র পূজারীদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল পৃথক একটি ধর্মমতও। অবশ্য সম্রাটের অনুমতি না পাওয়ায় মিত্রাইক ধর্মমত মূলত গুপ্ত ধর্মমত হিসাবেও পরিচিত ছিল। এমনকি অনেকের মতে, খ্রিস্ট ধর্মের উত্থানের পিছনেও মিত্রাইক ধর্মের যথেষ্ট প্রভাব ছিল।

সে যাই হোক, সূর্য পূজার সঙ্গে সূর্যের বার্ষিক উত্তরায়ণ-দক্ষিণায়ণের একটা যোগাযোগ থাকবে, তাতে সন্দেহ নেই। আর ডিসেম্বর মাসের এই সময়টা তাই যে কোনো সূর্য উপাসক সম্প্রদায়ের কাছেই ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে এই সময় নতুন ফসল ওঠার সময়। তাই গোটা সমাজ জুড়েই একটা উৎসবের মেজাজ থাকত। আর এই সময়েই দিনের দৈর্ঘ্যও ক্রমশ বাড়তে শুরু করে। সে-যুগে সঠিক হিসাব করা সম্ভব না হলেও মোটামুটি একটা হিসাব তো ছিলই। আর সেই আনুমানিক হিসাব থেকেই ২৫ ডিসেম্বর তারিখটি পালন করা হত মিত্রর জন্মদিন হিসাবে। প্রাচ্যের দেবতার সঙ্গে এভাবেই জড়িয়ে গিয়েছে বড়োদিনের ইতিহাসও।

তথ্যসূত্রঃ Mithra, god of the sun, was born on December 25, day of the winter solstice, Antonio Marco Martínez, Antiquitatem

আরও পড়ুন
বছরের প্রতিটা দিনই বড়োদিন পালন করেন ইংল্যান্ডের ‘মিস্টার ক্রিসমাস’!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বরফ দিয়েই তৈরি দুর্গ, রেস্টুরেন্ট – বিচিত্র বড়োদিন পালন চিনের হার্বিন শহরে