বড়োদিনে মহাকাশে পাড়ি 'জেমস ওয়েব'-এর

বড়োদিন মানেই উৎসব। বড়োদিন মানেই উপহারের দিন। আর উৎসবের এই বিশেষ দিনেই মহাকাশবিজ্ঞানীদের বিশেষ উপহার দিল মার্কিন মহাকাশ সংস্থা ‘নাসা’ (NASA)। ক্রিসমাসের আবহেই এবার মহাকাশে পাড়ি দিচ্ছে মহাকাশ বিজ্ঞানের ইতিহাসের সবথেকে শক্তিশালী টেলিস্কোপ ‘জেমস ওয়েব’। আজ ভারতের স্থানীয় সময় সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ এরিয়ান-৫ রকেটে চেপে মহাজাগতিক রহস্যসন্ধানে উড়ান দেবে ‘জেমস ওয়েব’ (James Webb Telescope)। 

আজ থেকে প্রায় ৩ দশক আগের কথা। মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপ (Hubble Space Telescope)। মহাকাশে থেকে কোনোরকম বাধাবিঘ্ন ছাড়াই দূরবর্তী নক্ষত্র এবং ছায়াপথের ছবি তোলা এবং রহস্য অনুসন্ধানই ছিল এই টেলিস্কোপ উৎক্ষেপণের মূল লক্ষ্য। তবে হাবল মানব সভ্যতার ইতিহাসের প্রথম মহাকাশ টেলিস্কোপ নয়। বরং, তা ছিল সবথেকে শক্তিশালী এবং বৃহৎ স্পেশ টেলিস্কোপ। এবার হাবলকে সমস্ত আঙ্গিকেই প্রতিস্থাপিত করতে চলেছে জেমস ওয়েব। 

ষাটের দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত নাসার প্রধান প্রশাসক ছিলেন জেমস ওয়েব। তাঁর হাত ধরেই শুরু হয়েছিল হাবল স্পেশ টেলিস্কোপ স্থাপনের কর্মসূচি। তাই তাঁর নামেই নামকরণ করা হয়েছে বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী এই স্পেস টেলিস্কোপের। বলতে গেলে, নাসার এই টেলিস্কোপ স্থাপন বিগ বিলিয়ন প্রোজেক্ট। সবমিলিয়ে এই প্রকল্পে নাসার খরচ হয়েছে হাজার কোটি মার্কিন ডলার। এমনকি তহবিলের ঘাটতি মেটাতে কানাডা এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির সঙ্গেও গাঁটছড়া বাঁধতে হয়েছিল নাসাকে। 

কিন্তু নাসার এই প্রোজেক্টে এই বিপুল পরিমাণ খরচে কারণ কী? মূলত, এই টেলিস্কোপ সাধারণ আলোকরশ্মি তো বটেই, অতিবেগুনি রশ্মির থেকেও কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোকে ক্যামেরাবন্দি করতে সক্ষম। ফলে, মহাজগতের অধিকাংশ ঘটনা যা সাধারণ ক্যামেরা বা টেলিস্কোপে ধরা পড়ে না, তা অনায়াসেই দেখতে পাওয়া যাবে ‘জেমস ওয়েব’-এর চোখে। পাশাপাশি অবলোহিত তরঙ্গের ছবি তোলার জন্য রয়েছে স্লিটলেস স্পেকট্রোগ্রাফ, নিয়ার-ইনফ্রারেড স্পেকটোগ্রাফ-সহ একাধিক যন্ত্রপাতিও। যা বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গকে বুঝতে সক্ষম। তুলে আনতে সক্ষম ১৩৫০০ কোটি বছরের পুরনো ব্রহ্মাণ্ডের ইতিহাস। 

আরও পড়ুন
হাবল টেলিস্কোপে ধরা দিল দূরতম আইনস্টাইন বলয়

স্বাভাবিকভাবে এই অভিনব টেলিস্কোপ পৃথিবী থেকে দেড় লক্ষ কিলোমিটার দূরে সূর্যের ঠিক বিপরীত দিকে স্থাপিত হবে। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকবে বিশালায়তন একটি দর্পন। বেরিলিয়াম নির্মিত সেই দর্পনকে মুড়ে রেখেছে ষড়ভূজাকৃতি সোনার পাত। সৌরঝড় কিংবা সূর্যের তাপীয় বিকিরণ থেকে এই টেলিস্কোপকে রক্ষা করবে এই আয়নার কবচ। সহ্য করতে পারবে ১১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। অন্যদিকে টেলিস্কোপের বাইরের অংশ -৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করতে পারবে অনায়াসেই। ফলে সহজেই মহাজাগতিক শীতলতা সঙ্গে লড়াই করতে পারবে জেমস ওয়েব।

আরও পড়ুন
টেলিস্কোপ হাতে ছুটতেন বাংলার গ্রামে-গ্রামে, বিদায়েও অনালোচিতই রইলেন এই জ্যোতির্বিজ্ঞানী

তবে এতকিছুর পরেও এই টেলিস্কোপের কার্যকারিতা নিয়ে থেকে যাচ্ছে সন্দেহ। আর তার অন্যতম কারণ হল, একবার স্থাপন করার পর, এই টেলিস্কোপ মেরামতের কোনো উপায় নেই। পূর্বসূরি হাবল পৃথিবী থেকে মাত্র ৬০০ কিলোমিটার ওপরে থাকায় তা সহজেই মেরামত করতে পারতেন বিজ্ঞানীরা। এমনকি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাতে নানান ধরনের ‘আপডেট’-ও করেছে নানা। কিন্তু এই সমস্ত সুযোগ থেকেই বঞ্চিত হবে ‘জেমস ওয়েব’। এখন দেখার কোনোরকম যান্ত্রিক গোলযোগ ছাড়াই ঠিক কতদিন সুষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যেতে পারে নাসার এই জায়েন্ট প্রোজেক্ট। বড়োদিনের আবহে চাপা দুশ্চিন্তাও যেন মিশে থাকল মহাকাশবিজ্ঞানীদের উন্মাদনায়…

আরও পড়ুন
চাঁদের বুকে সৌরজগতের বৃহত্তম রেডিও টেলিস্কোপ, পরিকল্পনায় নাসার বাঙালি বিজ্ঞানী

Powered by Froala Editor