পম্পেই-এ প্রত্নসামগ্রীর সন্ধানে রোবট-কুকুর

মানবদেহে অস্ত্রোপচার থেকে শুরু করে প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণ— প্রযুক্তির উন্নতিতে সবদিক থেকেই ক্রমশ মানুষের সমদক্ষ হয়ে উঠেছে রোবট। এবার তার মুকুটে চাপল প্রত্নতাত্ত্বিকের শিরোপাও। অবাক হচ্ছেন? অদ্ভুত লাগলেও এমনটাই সত্যি। পম্পেই-এর (Pompeii) প্রত্ন ক্ষেত্রে এবার প্রাচীন পরিকাঠামো সংরক্ষণের অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং ভূগর্ভস্থ বিভিন্ন প্রত্নসামগ্রীর (Archaeological Relics) সন্ধান পেতে নিয়োগ করা হল একজোড়া রোবটকে। বা, বলা ভালো রোবট-সারমেয়কে।

হ্যাঁ, ঠিক কুকুরের মতোই দেখতে এই রোবটের আকার। ভূগর্ভস্থ কক্ষ কিংবা টানেলে অধিকাংশ সময়ই প্রবেশ করতে পারেন না প্রত্নতাত্ত্বিকরা। ফলে, যন্ত্রের সাহায্যে দেওয়াল ভেঙে বা মাটি কেটে প্রবেশপথ তৈরি করতে হয় তাঁদের। তারপরেও সাফল্য যে মিলবেই, তার নিশ্চয়তা নেই কোনো। পাশাপাশি এই কার্যক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রাচীন স্থাপত্য তথা নির্মাণগুলিও। এইসকল কথা চিন্তা করেই এই বিশেষ রোবট-সারমেয় প্রস্তুত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা বোস্টন ডায়নামিক্স। 

আয়তন ও ওজন কম হওয়ায়, মানুষের পক্ষে যাওয়া বিপজ্জনক এমন ভঙ্গুর স্থানে অনায়াসেই ঢুকে যেতে পারে এই রোবট। লেজার স্ক্যানিং, নাইট ভিসন এবং থ্রি-ডি চিত্র সংগ্রহের মতো বৈশিষ্ট্য থাকায় বাড়তি কোনো সরঞ্জামও সরবরাহ করতে হয় না এই রোবটকে। ফলে, খুব দ্রুত বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বিস্তারিত তথ্য মানুষের কাছে এনে দিতে সক্ষম এই রোবট সারমেয়। 

২০১৩ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের আখ্যা দিয়েছিল পম্পেইকে। তবে পম্পেই-এর প্রত্নক্ষেত্র যথেষ্ট ভঙ্গুর এবং সূক্ষ্ম হওয়ায়, এখনও পর্যন্ত সেভাবে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চালাতে পারেননি গবেষকরা। এবার সেই অসম্পূর্ণ কাজের দায়িত্বই চেপেছে দুই রোবট-সারমেয়ের উপর। প্রাথমিক পর্যায়ে ১৬৩ একর প্রত্নক্ষেত্রে ঐতিহাসিক সামগ্রী এবং রেলিকসের সন্ধান চালাবে এই দুই যন্ত্র-কুকুর। 

তবে এই প্রথম নয়। এর আগে এই একই সংস্থার তৈরি রোবট-সারমেয় মোতায়েন করা হয়েছিল ইউক্রেনে। অভিশপ্ত চের্নোবিল নগরীর তেজস্ক্রিয়তা পরিমাণ এবং পরিদর্শনের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল এই কুকুর। বেশ সাফল্যের সঙ্গেই চের্নোবিল সারকোফেগাসে ফাটল সংক্রান্ত তথ্যও এনে দিয়েছিল তারা। এখন দেখার পম্পেইতেও এই প্রযুক্তি সেভাবেই সাফল্যের মুখ দেখে কিনা…

Powered by Froala Editor