কিছু সময় পরপর যে কোনো সংগঠনেই সদস্যপদ পরিবর্তন হয়। পরিবর্তন হয় সভাপতি, সহসভাপতির পদগুলিও। সেদিন একটি ক্লাবে তেমনই এক পরিবর্তন ঘটছিল। পুরনো সভাপতি সসম্ভ্রমে নতুন সভাপতিকে পদ ছেড়ে দিলেন। এতদিন সাধারণ সদস্য হয়ে থাকা এই পুরুষটিই এবার পূর্ববর্তী সভাপতিকে টপকে গিয়েছে। তবে সাফল্যের মাপকাঠিতে নয়। টপকে গিয়েছে ব্যর্থতার মাপকাঠিতে। আজ্ঞে হ্যাঁ, এই ক্লাব এমন এক ক্লাব যেখানে মর্যাদার মাপকাঠি ব্যর্থতাই। যে পুরুষ যতবার প্রেমে ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁর মর্যাদা তত বেশি। অবশ্য এখানে প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার অর্থ বিবাহ প্রস্তাবে প্রত্যাখ্যাত হওয়া।
এই গল্প আজ থেকে অন্তত ২০০ বছর আগের। কলকাতা (Kolkata) তখন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির (British East India Company) রাজধানী। বহু ইংরেজ কর্মচারী কাজ করেন এখানে। তাঁদের জন্য ততদিনে গড়ে উঠেছে রাইটার্স বিল্ডিং। তবে বেশিরভাগ কর্মচারীই বিবাহের আগে চলে আসেন। কিন্তু সাহেবদের জাত্যাভিমান যাবে কোথায়? আর এদেশে তাঁরা যে রাজার জাত। কেউ কেউ অবশ্য অভিজাত বাঙালি পরিবারেই বিবাহ সারতেন। তবে বাকিরা অপেক্ষা করে থাকতেন, কবে জাহাজঘাটে কোনো ব্রিটিশ জাহাজ ভিড়বে। আর সেই জাহাজে যে ব্রিটিশ নারীরা থাকবেন, তাঁদের কাছেই সরাসরি হাজির হতে হবে বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে। ঠেলাঠেলি করে আগে গিয়ে কন্যার পাণিগ্রহণ করতেই হবে। এমনই ছিল প্রতিযোগিতা। তবে তারপরেও সফল হতেন না অনেকেই। কেউ হয়তো ঠেলাঠেলির প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছিলেন। কেউ আবার পছন্দের কন্যার কাছে পৌঁছেও ব্যর্থ হলেন। কারণ কন্যাটি সেই সাহেবকে পছন্দ করলেন না।
ব্যর্থমনোরথ সেইসব ইঙ্গপুরুষরাই কলকাতার বুকে গড়ে তুলেছিলেন ‘জবাব ক্লাব’। অবশ্য ‘জবাব’ কথাটি এখানে উত্তর অর্থে নয়, বরং প্রত্যাখ্যান অর্থে ব্যবহৃত হয়েছিল। এই ক্লাবের গঠনকাঠামো কিন্তু ছিল একেবারে গোপন। সদস্যদের নাম থেকে কোনোকিছুই সংগঠনের বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। আর কেউ একবার ভাগ্যক্রমে পাণিগ্রহণে সফল হলেই তাঁকে ক্লাবের সদস্যপদ খোয়াতে হত। অনেকে ক্লাবের সদস্যপদ রক্ষার জন্য আজীবন ব্রহ্মচর্যই পালন করতেন। অথবা বারবার চেষ্টা করেও সফল হতে পারতেন না কিছুতেই। ফলে বিষয়টা ঠিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিরকুমার সভা’-র মতো হয়ে উঠত।
তবে শুধু যে পুরুষরাই পাণিগ্রহণে ব্যর্থ হতেন, এমনটা কিন্তু নয়। ইংল্যান্ড থেকে অনেক যুবতীও আসতেন শুধুমাত্র বিবাহের উদ্দেশ্য নিয়েই। কারণ স্বদেশে তাঁদের বিবাহ সম্ভব হত না। এদেশে কর্মরত সাহেবদের মধ্যে কন্যার চাহিদা আছে। কিন্তু এতটা পথ এসেও অনেকেই পাত্র পেতেন না। সেইসব মহিলারা মিলে গড়ে তুলেছিলেন ‘স্পিন্টার্স সিক্রেট সোসাইটি’। তবে সুযোগ পেলে মহিলারা আবার স্বদেশে ফিরে যেতেন। কিন্তু কাজ ছেড়ে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পুরুষদের ছিল না। তাঁদের তাই ‘চিরকুমার সভা’-র, থুরি, ‘জবাব ক্লাব’-এর সদস্য হয়েই কাটিয়ে দিতে হত জীবন।
আরও পড়ুন
সমপ্রেমের ছবিতে একাকার যিশু-কৃষ্ণ, কলকাতার বুকে একটুকরো প্রদর্শনী
তথ্যসূত্রঃ সেকালের কলিকাতার যৌনাচার, মানস ভাণ্ডারী
আরও পড়ুন
কলকাতাকে নাখোদা উপহার দিয়েও শহর ছাড়ছেন কুটচি মেমোনরা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
কলকাতার বসে আজও ‘স্বাধীন পাশতুনিস্তান’-এর স্বপ্ন বোনেন সীমান্ত গান্ধীর পৌত্রী