কলকাতার বুকে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের কোর্স, পারিশ্রমিক ১০টি সোনার মোহর!

কলকাতা শহরে পদার্থবিদ্যা এবং রসায়নের কোর্স করাবেন জনৈক ডাক্তার ডিগউইডি। শহরের রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে রয়েছে বিজ্ঞাপন। কিন্তু কী এই বিষয়গুলি? তখনও হয়তো বাংলার সাধারণ মানুষ কেউই পরিচিত নন বিষয়গুলির সঙ্গে। এই বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছিল ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে। স্বাভাবিকভাবেই নড়েচড়ে বসেছিলেন অনেকে। কী এই ব্যাপারগুলি?

আজকাল আমাদের সবার কাছেই পরিচিত ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি এই শব্দগুলি। তবে ব্রিটিশ শাসনের গোড়ার দিকে বিষয়টি একেবারেই তেমন ছিল না। যদিও জড়বিজ্ঞানের গবেষণা ভারতে নতুন নয়। অন্তত ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পৃথিবীর নানা প্রান্তে প্রায় একসঙ্গেই শুরু হয় পদার্থবিদ্যা এবং রসায়নের চর্চা। ভারতেও চর্চা শুরু হয় প্রায় সমসময়েই। এমনকি বৈদিক সাহিত্যেও জড়বিজ্ঞানের চর্চার নানা নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে কণাদ বা আর্যভট্টের মতো গবেষকের নাম কে না জানেন! বিশেষকরে বৌদ্ধ মঠগুলিতে জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা চলেছে রীতিমতো গভীরে। কিন্তু মধ্যযুগ থেকেই ক্রমশ ভারতে বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হতে থাকে। অন্যদিকে পাশ্চাত্য দেশগুলিতে এই সময়েই শুরু হয় আধুনিক বিজ্ঞানচর্চা।

ফিজিক্স শব্দটি সম্ভবত এসেছে গ্রীক শব্দ ফুসিস থেকে। ল্যাটিন ভাষার শব্দটি ছিল ফিজিকা এবং পরে ইংরেজি ভাষায় ফিজিক্স নামে পরিচিতি পায়। অন্যদিকে কেমিস্ট্রি শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ কিমিয়া থেকে। এই দুই ধারার চর্চাই প্রায় একইরকম প্রাচীন। তবে ক্রমশ গবেষণায় ও পঠনপাঠনে নানা পরিবর্তন এসেছে। একসময় ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে রসায়ন বলতেই মূলত ‘অ্যালকেমি’-কে বোঝানো হত। এই অপবিজ্ঞানের ধারা থেকে বৈজ্ঞানিক রসায়নচর্চার শুরু ১৬৬১ সালে রবার্ট বোয়েলের হাত ধরে। অন্যদিকে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জন্মও কোপার্নিকাস-গ্যালিলিও-নিউটনের আবিষ্কারের সূত্র ধরেই। কিন্তু ভারতে ততদিনে বিজ্ঞানের চর্চা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে বাঙালির নতুন করে পরিচয় হবে বেশ কয়েক বছর পরে হিন্দু কলেজ এবং শ্রীরামপুর কলেজের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে। কিন্তু তার আগেও যে বিক্ষিপ্তভাবে বিজ্ঞানচর্চার কোর্স আয়োজন করা হত, তার প্রমাণ মেলে ১৭৯৫ সালের এই বিজ্ঞাপন থেকে। বিজ্ঞাপনে বলা হয় ২৫-৩০টি ক্লাসের মধ্যেই কোর্স শেষ হবে। অর্থাৎ খুব গভীরে গিয়ে বিজ্ঞানের আলোচনা হয়নি সেখানে। বরং দুটি বিষয় সম্বন্ধে সামান্য একটু আভাস দেওয়া যেতে পারে। তবে সেই সামান্য চর্চাও ছিল সাধারণ মানুষের আয়ত্তের বাইরে। কারণ একটি কোর্সের জন্য খরচ করতে হবে ১০টি সোনার মোহর। এই তথ্যও জানা যায় বিজ্ঞাপন থেকেই। তবে শিক্ষার সার্বিকীকরণ না হোক, বিজ্ঞানের চর্চা শুরুতে এই সমস্ত উদ্যোগ কিছুটা প্রভাব তো রেখেছিল নিশ্চয়ই।

আরও পড়ুন
কলকাতার বুকে ‘লেখক ব্যাঙ্ক’, তিন দশক আগে উদ্যোগ নিয়েছিলেন সন্দীপ দত্ত

তথ্যসূত্রঃ কলিকাতা সেকালের ও একালের, হরিসাধন মুখোপাধ্যায়

আরও পড়ুন
আকণ্ঠ মদ খেয়ে সাহেবমৃত্যু কলকাতায়, ভবঘুরেদের জন্য তৈরি হল অ্যাসাইলাম

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ভেন্টিলেশনে থাকা কোভিড-আক্রান্তের সন্তানপ্রসব, বিরল অস্ত্রোপচারে সাফল্য কলকাতায়

More From Author See More