ইউক্রেন-রাশিয়া দ্বন্দ্ব (Ukraine-Russia Conflict) এবং মস্কোর আগ্রাসন নিয়ে বিগত কয়েকদিন ধরেই উত্তাল গোটা বিশ্ব। সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নিয়ে, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক পথেই রাশিয়াকে চাপে ফেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র। এবার আরও খানিকটা দীর্ঘ হল নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকা। সম্প্রতি রাশিয়ান খনিজ তেল (Patrolium Oil) ও জ্বালানি গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাইডেন প্রশাসন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত শুধু রাশিয়াতেই নয়, প্রভাব বিস্তার করবে গোটা বিশ্বজুড়েই। এক ধাক্কায় অনেকটাই বাড়বে পেট্রোপণ্যের দাম। এমনটাই অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারিই ইউক্রেনে আক্রমণ চালায় রুশ বাহিনী। তারপর থেকেই বৈশ্বিক বাজারে ঘোরাফেরা করছিল রাশিয়ান খনিজ তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব। তবে তাতে বিশ্বজুড়ে তেলের দাম বৃদ্ধির কথা ভেবেই, খানিক সংকোচে ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটদের চাপে পড়ে রাশিয়ান পেট্রোপণ্যের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন তিনি।
আমেরিকার এই পদক্ষেপকে অন্যান্য পশ্চিমী দেশগুলিও অনুসরণ করলে, খনিজ তেলের ভয়াবহ ঘাটতি দেখা দেবে বৈশ্বিক বাজারে। রাশিয়ার থেকে প্রতিদিন গড়ে ১ লক্ষ ব্যারেল খনিজ তেল আমদানি করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট আমদানিকৃত তেলের মাত্র ৫ শতাংশ। অন্যদিকে ৪২ লক্ষ ব্যারেল রাশিয়ান তেলের গ্রাহক ইউরোপের দেশগুলি। তারাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পথে হাঁটলে আকাশ ছোঁবে তেলের দাম।
চলতি মাসেই বৈশ্বিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ছুঁয়েছে ব্যারেলপিছু ১৩০ ডলার। যা গত মাসের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে ৪০ ডলার। কূটনীতিবিদদের অনুমান, রাশিয়ান তেল ইউরোপেও নিষিদ্ধ হলে তা পৌঁছাতে পারে ২৪০ ডলারে। অর্থাৎ, প্রায় দ্বিগুণে পৌঁছাতে পারে পেট্রোপণ্যের দাম। অবশ্য এখনও পর্যন্ত এই ধরনের কোনো মন্তব্যই করেনি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। অন্যদিকে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ হবে না বলেই জানিয়েছে জার্মানি।
আরও পড়ুন
রাশিয়ার আক্রমণে অগ্নিগদ্ধ ইউক্রেনের পারমাণবিক কেন্দ্র, ‘চের্নোবিল’ পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটে বৈশ্বিক তেলের এই ঘাটতি ১৯৯০ সালের পর এটাই সর্বোচ্চ। পরিসংখ্যান বলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পঞ্চম বৃহত্তম তেল সংকট আসন্ন পৃথিবীর বুকে। কারণ, কোনো বিকল্প নেই রাশিয়ার উৎপাদিত খনিজ তেলের। ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের তেলের ওপর আমেরিকা জোর দিলেও, তা এই সামগ্রিক ঘাটতি পূরণ করতে পারবে বলেই অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
আরও পড়ুন
আমেরিকাকে মাত্র ৭২ লক্ষ ডলারে আলাস্কা বিক্রয়, রাশিয়ার ঐতিহাসিক ‘ভুল’
তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি পেলেও, বিগত এক মাস ধরে সেইভাবে তেলের দাম বাড়েনি ভারতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা পর রাশিয়া উৎপাদিত খনিজ তেল বিক্রির জন্য ভারত ও চিনের কাছেই দ্বারস্থ হবে বলে মনে করছেন কূটনীতিবিদদের একাংশ। তাতে ভারতেও পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা বাড়ছে ক্রমশ। এখন দেখার কোনদিকে এগোয় আগামীর পরিস্থিতি…
আরও পড়ুন
বিশ্বের বৃহত্তম দেশ, প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশও; কেন ‘অজেয়’ রাশিয়া?
Powered by Froala Editor