বিস্ফোরক, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা নাইজেরিয়ার কারাগারে; পলাতক ১৮০০ বন্দি

দক্ষিণ নাইজেরিয়ার ওয়েরি কারাগার। সোমবার সেই কারাগারের প্রবেশদ্বারে রুটিন পাহারা দিচ্ছিলেন নিরাপত্তাকর্মীরা। এমন সময় কারাগারের খানিকটা দূরে এসে দাঁড়াল বেশ কয়েকটি ট্রাক এবং বাস। সন্দেহজনক মনে হওয়ায় বিষয়টির তদারকি করতে এগিয়ে যান কয়েকজন দ্বাররক্ষক। তবে বাস পর্যন্ত আর পৌঁছতে পারেননি তাঁরা। তার আগেই গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে লুটিয়ে পড়ল অনেকগুলো দেহ। রকেট লঞ্চারের বিস্ফোরণে মুহূর্তে উড়ে গেল জেলের প্রশাসনিক ব্লক।

ওভেরি শহরের এই কারাগারই নাইজেরিয়ার বৃহত্তম কারাগার। আর সেখানেই সোমবার ঘটে গেল নাইজেরিয়ার ইতিহাসের বৃহত্তম গারদ ভাঙার ঘটনা। সশস্ত্র দুষ্কৃতিরা কার্যত তছনছ করে দিল গোটা জেলখানাটি। পলাতক ১ হাজার ৮০০-র বেশি বন্দি। এ যেন ঠিক হলিউডের কোনো অ্যাকশন সিনেমার প্রেক্ষাপট। দুষ্কৃতিদের আকস্মিক এই অভিযানে তাজ্জব নাইজেরিয়ার প্রশাসনও। 

গোটা নাইজেরিয়া জুড়েই এখন থমথমে পরিবেশ। ঘটনাটিকে পরিকল্পিত সন্ত্রাসবাদ বলেই অভিহিত করেছেন রাষ্ট্রপতি মহম্মদ বুহারি। বিষয়টির তদন্ত দেওয়া হয়েছে নাইজেরিয়ার সামরিক বাহিনীকে। তবে এহেন আক্রমণে আতঙ্কিত ওভেরি শহরের নাগরিকরাও। আশঙ্কা, এই শহরেই লুকিয়ে রয়েছে পলাতক অপরাধীরা। কাজেই সাধারণ নাগরিকরা যে শিকার হতে পারেন তাদের, থেকে যাচ্ছে সেই সম্ভাবনা। ইতিমধ্যে গোটা ইমো প্রদেশজুড়ে লাগু করা হয়েছে নাইট কার্ফিউ।

তবে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রাথমিক সন্দেহ, এই ঘটনার পিছনে জড়িত রয়েছে বিয়াফ্রা জনগোষ্ঠীর বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘ইন্ডিজেনাস পিপল অফ বায়াফ্রা’। এই প্রাচীন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে নাইজেরিয়ার ফেডারাল সরকারের সাপে-নেউলের সম্পর্ক স্বাধীনতার পর থেকেই। ১৯৭০ সালে ব্রিটিশ রাজ থেকে মুক্ত হওয়ার পর বায়াফ্রা জনগোষ্ঠী পৃথক দেশ গঠন করতে চেয়েছিল। তবে তাতে রাজি হয়নি নাইজেরিয়ার তৎকালীন প্রশাসন। যার ফল হিসাবে ৩০ মাসের দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের সাক্ষী হয়েছিল আফ্রিকার সবথেকে জনবহুল দেশ।

আরও পড়ুন
একের পর এক খুন, জেল ভাঙার ‘কৃতিত্ব’; কেন আত্মসমর্পণ করলেন ‘বিকিনি কিলার’?

এখনও মাঝেমধ্যেই বায়াফ্রা মিলিশিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষ লেগে থাকে নিরাপত্তা বাহিনীর। তবে এই ঘটনার দায় সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন বায়াফ্রা জনগোষ্ঠীর প্রধান। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক ঘটনার জেরে প্রশ্নের মুখে নাইজেরিয়ার আইনি পরিস্থিতি। ক্রমাগত একের পর এক স্কুল থেকে শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর অপহরণ থেকে শুরু করে কারাগার ভেঙে বন্দিদের পলায়ন— সব মিলিয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন নাইজেরিয়ার প্রশাসন। বর্তমান পরিস্থিতি আয়ত্তের মধ্যে রয়েছে বলে রাষ্ট্রপতি আশ্বাস দিলেও আতঙ্কের মেঘ সরছে না সাধারণ মানুষের মন থেকে…

আরও পড়ুন
গিন্সবার্গের কবিতা ছাপিয়ে খেটেছেন জেলও; প্রয়াত মার্কিন কবি ও প্রকাশক লরেন্স ফারলিংহেটি

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বর্জ্য থেকে তৈরি আসবাব, পথ দেখাচ্ছেন প্রাক্তন জেলবন্দিরাই