মানুষের মৃতদেহের ওপরেই জন্মাবে গাছ, বিরল সমাধিক্ষেত্র কানাডায়

একটা শরীর, দীর্ঘদিন ধরে এই পৃথিবীর রঙে-রসে বেঁচে থাকে। তারপর হঠাৎই আসে মৃত্যু। কিন্তু এখানেই কি সব শেষ? বিজ্ঞান বলে, মৃত্যুর পর আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। কিন্তু এখনও বহু মানুষ সেকথা বিশ্বাস করতে পারেন না। তার কারণ যে শুধুই ধৰ্মীয়, তা নয়। এই অবিশ্বাসের সঙ্গে মিশে থাকে ভালোবাসা আর মানবিক টানাপোড়েন। এতোদিনের পরিচিত মানুষটা, হঠাৎ 'নেই' হয়ে যাবে, এটা ভাবতেই কষ্ট হয়। তবে মৃত্যুর পরে যদি সেই ব্যক্তির শরীরে পুস্ট হয়ে বেড়ে ওঠে আরেকটি জীবন! তাহলে তো আর 'নেই' হয়ে যেতে হয় না।

মৃত্যুর পর মানুষের মৃতদেহের উপরেই এবার জন্ম নেবে গাছ। মৃতদেহের সমস্ত রসদ সংগ্রহ করে সবুজ পাতায় ভরিয়ে তুলবে চারিদিক। সেই ব্যবস্থাই করতে চলেছে গ্রিন ফিউরিনারি কোম্পানি 'বায়োস'। চারিদিকে যখন প্রবলভাবে দেখা দিয়েছে স্থান-সংকট, মৃতদেহ সৎকারের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার অভাব, তখন এমন উদ্যোগই তো প্রয়োজন ছিল। এভাবে যদি আবার পৃথিবীর বুকের থেকে হারিয়ে যাওয়া সবুজ ফিরে আসে। সেই উদ্দেশ্যেই কানাডায় পথচলা শুরু করেছে 'বায়োস পার্ক'। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর সমাধিক্ষেত্রেই জন্ম নেবে ওক, গিনকগো, ম্যাপলের সারি। এমনকি কেউ চাইলে সেখানে তার সম্পূর্ণ পরিবারের জন্যও সমাধিক্ষেত্র কিনতে পারেন। তাছাড়া এই উদ্যোগের আরও একটি বৈশিষ্ট্য বেশ অভিনব। সাধারণত সব জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য থাকে ভিন্ন ভিন্ন সমাধিক্ষেত্র। কিন্তু 'বায়োস পার্ক'এ পাশাপাশি স্থান পাবে সমস্ত ধর্মের মানুষ। এই বিভেদ-জর্জরিত পৃথিবীতে মৃত্যুর পরে জুড়ে জুড়ে থাকার চেষ্টাও কি খুব জরুরি নয়?

কানাডায় একটি সম্পূর্ণ সমাধিক্ষেত্র জুড়ে কাজ শুরু করলেও, ইতিমধ্যে অন্তত ৫০টি দেশে 'বায়োস' তার গ্রিন আর্ন বিক্রি করেছে। সাধারণত উত্তর ক্রান্তীয় অঞ্চলের কিছু গাছ দিয়ে তাদের কাজ শুরু করলেও ক্রেতাদের পছন্দ মতো গাছের যোগান দিতে প্রস্তুত তারা। তাছাড়া কিছু বিরল প্রজাতির গাছের কথাও তাঁরা ভাবছেন বলে জানিয়েছেন কোম্পানির আধিকারিকরা। 'এবার মরলে গাছ হব' তাই এখন আর কোনো দূর আকাঙ্খা নয়। বরং সমস্ত জীবন ধরে আধুনিক মানুষ প্রকৃতির বুকে যে শোষণ চালাতে অভ্যস্ত অথবা বাধ্য, মৃত্যুর পর তারই কিছুটা পরিশোধের সুযোগ এনে দিল 'বায়োস' কোম্পানি।

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More