‘স্টর্ম করিডোরে’র অন্তর্ভুক্ত বাংলাও, ভবিষ্যতেও হানা দিতে দিতে পারে টর্নেডো!

ভারতীয় উপমহাদেশে টর্নেডো। তাও আবার খোদ বাংলায়। এমনটা কল্পনা করাও বেশ দুষ্কর। তবে বিগত কয়েকদিনের রেকর্ড একেবারেই ভেঙে দিয়েছে সেই ধারণাকে। ইয়াস আতঙ্কের পাশাপাশি, বিগত কয়েকদিনে বাংলার বুকে পৃথক পৃথক তিনটি জায়গায় ধ্বংসলীলা চালিয়েছে টর্নেডো। এমনকি কলকাতাতেও টর্নেডোর আশঙ্কার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল রাজ্য সরকারের তরফে। কিন্তু হঠাৎ বাংলার বুকে একের পর এক টর্নেডো হওয়ার কারণ কী? 

“ভালো করে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে ধরনের টর্নেডো হয়, এগুলো কিন্তু তেমন মারাত্মক না। মূলত এগুলিকে মিনি টর্নেডো হিসাবেই ধরে নেওয়া যায়। এবং সেগুলি তৈরি হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবেই। টর্নেডোর জন্ম নেওয়ার অন্যতম কারণ হল থান্ডারস্টর্ম বা কিউমুলোনিম্বাস মেঘ। অনেক ঘূর্ণিঝড়ের ল্যান্ডফল হওয়ার পরেই টর্নেডো তৈরি হওয়ার অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়ে যায়। ইয়াসের ক্ষেত্রেও সেই একই ঘটনা ঘটেছে”, জানালেন খড়গপুর আইআইটির আবহাওয়াবিদ্যার গবেষক তথা অধ্যাপক জয়নারায়ণ কুট্টিপুরাহ। 

তবে ইয়াস দুর্যোগ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও একেবারে নিরাপদ নয় বাংলা। আবারও হানা দিতে পারে ভয়ঙ্কর টর্নেডো। ডঃ জয়নারায়ণ সতর্ক করলেন, “ভারতীয় উপমহাদেশে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমে পেশোয়ার পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে একটি স্টর্ম করিডোর। ফলত, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত, প্রাক-বর্ষা সময়ে টর্নেডো হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায় এই অঞ্চলে।”

পরিসংখ্যান বলছে, ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে সবথেকে টর্নেডোপ্রবণ অঞ্চল পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ। বঙ্গোপসাগর এবং বাংলার গাঙ্গেয় উপত্যকায় এর আগেও বহুবার দেখা দিয়েছে টর্নেডো। এমনকি ভারতের বুকে প্রথম নথিভুক্ত টর্নেডোই দেখা গিয়েছিল ১৮৩৮ সালের ৮ এপ্রিল। তারপর থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মোট ৮৬টি টর্নেডোর ঘটনা ঘটেছে বাংলায়। আর সেখানেই থেকে যায় অন্য একটি প্রশ্ন। দেড় দশকেরও বেশি সময়ে যেখানে মাত্র ৮৬টি টর্নেডো দেখা গেছে, সেই সংখ্যা একটি মরশুমেই এতটা বেড়ে যাচ্ছে কীভাবে? 

আরও পড়ুন
৭ বছর পর ভারতের উপকূলে আছড়ে পড়ল টর্নেডো

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে, ফিরে যেতে হবে গাঙ্গেয় উপত্যকায় ঘূর্ণি তৈরির কারণের দিকেই। আর তা হল নদীর জলের দ্রুত বাষ্পীভবন। উষ্ণ-আর্দ্র বায়ুই ঘূর্ণন তৈরি করে এই অঞ্চলে। ফলত, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই যে প্রাবল্য বাড়ছে টর্নেডোর তা এক প্রকার পরিষ্কার। গবেষক জয়নারায়ণ জানালেন, “জলবায়ুর পরিবর্তনই যে কোনো ঝড়ের তীব্রতা এবং প্রাবল্য বাড়িতে তোলে। টর্নেডোর প্রকোপ বাড়ার ক্ষেত্রেও তেমনটাই বলছে অনেক গবেষণা। তবে আরও বিস্তারে গবেষণা দরকার এই বিষয়টির ওপরে।”

আরও পড়ুন
অবশেষে উদঘাটিত হতে চলেছে বৃহস্পতি গ্রহে ঝড়ের রহস্য

চারিত্রিকভাবে সাইক্লোন বা পরিচিত ঘূর্ণিঝড়ের তুলনায় আকৃতিতে অনেকটাই সংকীর্ণ হয় টর্নেডো। তার পরিধি বড়োজোর বিস্তৃত থাকে কয়েকশো মিটার পর্যন্ত। কিন্তু স্বল্প পরিসরেও ভয়ঙ্কর বিধ্বংসী রূপ নিতে পারে তা। গতিপথে আগত সমস্ত জিনিসকেই উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে টর্নেডো। এমনকি শক্তিশালী হলে তার গতিবেগ কোনো কোনো ক্ষেত্রে পৌঁছাতে পারে ৩০০ মাইল প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত। ফলে আগামী দিনে টর্নেডোর ব্যাপারে আরও সতর্ক থাকতে হবে মানুষকে। সেইসঙ্গে আবহাওয়া কেন্দ্রকেও যে সক্রিয়ভাবে এই বিষয়টায় নজর রাখতে হবে, সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। 

আরও পড়ুন
ক্ষয়ক্ষতি নেই ঝড়ে, পৃথিবীর প্রথম ‘হারিকেন-প্রুফ’ দেশ হতে চলেছে এই ছোট্ট দ্বীপটি

কিন্তু মিনিট খানেক স্থায়িত্বের এই আকস্মিক যমদূতের পূর্বাভাস দেওয়া কি আদৌ সম্ভব? গবেষণা বলছে, টর্নেডোর জন্য দায়ী থাকা কিউমুলোনিম্বাস মেঘ মূলত তৈরি হয় অনেক নিচু উচ্চতায়। দুপুর ও সন্ধের মধ্যে এই ধরনের ঘূর্ণি তৈরি হওয়ার প্রবণতা থাকে সবথেকে বেশি। ফলত, এই সময়ে স্বল্প উচ্চতায় ঘন কালো মেঘ দেখলেই সতর্ক হতে হবে আবহাওয়াবিদদের। পাশাপাশি তৎপর থাকতে হবে প্রশাসনকেও। দ্রুত ব্যবস্থা নিলে খানিকটা হলেও এড়িয়ে যাওয়া যাবে ক্ষতির পরিমাণ… 

Powered by Froala Editor