হঠাৎ জেগে ওঠা আগ্নেয়গিরিতে বিস্ফোরণ, বিপন্ন সেন্ট ভিনসেন্ট দ্বীপ

অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হোক বা আপদকালীন প্রশাসনিক ব্যবস্থা কোনোকিছুই মানুষকে যেন চরম পরিস্থিতির হাত থেকে আর রক্ষা করতে পারছে না। অন্তত ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের সেন্ট ভিনসেন্ট দ্বীপের সাম্প্রতিক আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণ যেন সেই কথাই তুলে ধরল প্রকাশ্যে। বিগত কয়েক দশক ধরে ঘুমিয়ে থাকা লা সুফ্রিয়ার আগ্নেয়গিরি জেগে উঠেছিল গত ডিসেম্বরেই। ভূতাত্ত্বিকরা বিপদের সংকেত দিয়েছিলেন আগেই। কিন্তু সঠিক দিনক্ষণ জানা ছিল না কিছুই। শুক্রবার হঠাৎ বিস্ফোরণে তাই রীতিমতো বিপন্ন সেন্ট ভিনসেন্ট দ্বীপের মানুষ।

প্রশাসন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে বিপদগ্রস্ত অঞ্চল থেকে অন্তত ২০ হাজার মানুষকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। কিন্তু চলতি করোনা পরিস্থিতিতে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া কতটা সহজে এগোবে, সে-বিষয়ে সন্দিহান অনেকেই। যদিও সেন্ট ভিনসেন্ট দ্বীপে ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়া অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। তবে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, এখনও প্রায় ১০ হাজার মানুষ টিকা পাননি। আর পুণর্বাসনের জন্য নৌকায় ওঠার প্রাথমিক শর্ত হিসাবে টিকাকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে এই ১০ হাজার মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই যায়।

সেন্ট ভিনসেন্ট দ্বীপে আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণ অবশ্য কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। এখানকার আদিম অধিবাসীরা এই উপদ্রবের সঙ্গে পরিচিত। একের পর এক দ্বীপপুঞ্জে তাই ঘুরে বেড়াতেন তাঁরা। তবে অষ্টাদশ শতকে ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনের সময় থেকেই যাযাবর জীবন শেষ হয়। এই সময়েই আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের ভয়াবহ রূপ ফুটে ওঠে প্রকট হয়ে। ১৮১২ এবং ১৯০২-০৩ সালের বিস্ফোরণের ঘটনায় কত মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, তার হিসাব ব্রিটিশ সরকার রাখেনি। লা সুফ্রিয়ার আগ্নেয়গিরি অবশ্য দীর্ঘদিন ঘুমিয়েই ছিল। ১৯৭৯ সালে হঠাৎ তাতে অগ্ন্যুদ্গার দেখা যায়। যদিও বড়ো কোনো বিপদ-সংকেত আগে পাওয়া যায়নি।

গত ডিসেম্বরে পুনরায় অগ্ন্যুদ্গার শুরু হলে নড়েচড়ে বসেন ভূতাত্ত্বিকরা। বেশ কিছুদিন ধরে তেমন বড়ো বিপদের আশঙ্কা করেননি কেউই। মার্চে অগ্ন্যুদ্গারের সঙ্গে শুরু হয় মৃদু ভূকম্প। তখনই প্রথম বড়ো বিস্ফোরণের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তবে পুনর্বাসন শুরু করতে দেরি হয়েই যায়। আর তার প্রধান কারণ, বিস্ফোরণের কোনো সঠিক দিনক্ষণ বলতে পারেননি গবেষকরা। শুক্রবার হঠাৎ বিস্ফোরণে আগুন উঠে আসে প্রায় ৬০ ফুট পর্যন্ত। তবে আপাতত চূড়ান্ত বিস্ফোরণের দেরি আছে বলেই মনে করছেন গবেষকরা। ম্যাগমার সঙ্গে বেশ কিছুটা বিষাক্ত গ্যাস উঠে আসছে আগ্নেয়গহ্বর দিয়ে। সেই গ্যাসের পিণ্ড ফেটে পড়ার আগেই কি পুনর্বাসন সম্পূর্ণ করা যাবে? আপাতত এই প্রশ্নের উত্তর জানেন না কেউই।

Powered by Froala Editor