ডাউন সিনড্রোমকে হারিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি তরুণ ফটোগ্রাফারের

বয়স তখন কতই বা আর? তিন-চার বছর হবে। আর পাঁচটা সমবয়সি শিশুর থেকে শারীরিক কিংবা মানসিক বিকাশে খানিকটা যেন পিছিয়ে পড়ছিলেন তিনি। কাজেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তাঁর বাবা-মা। না, সেদিন আশ্বাস দিতে পারেননি সেই চিকিৎসক। জানিয়ে দিয়েছিলেন, কোনোদিন স্বাভাবিক হতে পারবে না তাঁদের সন্তান। কেননা, তিনি আক্রান্ত হয়েছেন ডাউন সিনড্রোমে। সেদিনের সেই শিশু আজ ২৩ বছরের তরুণ। চিকিৎসকের সেই ভবিষ্যদ্বাণীকে শুধু ভুল বলেই প্রমাণ দেননি তিনি, হার মানিয়েছেন শারীরিক প্রতিকূলতাকেও।

হাস্টন ভ্যান্ডারগ্রিফ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি প্রদেশের এই বাসিন্দা এখন বিশ্বজয়ী। ইতিমধ্যেই তিনি ঘুরে ফেলেছেন পৃথিবীর ২৬টি দেশ। আলোকচিত্র গ্রহণের জন্য পেয়েছেন আন্তর্জাতিক পুরস্কারও। সম্প্রতি নিজের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল থেকে এই গোটা জার্নিটার কথা জানান হাস্টন। একেবারে নিজস্ব অভিনব কায়দায়। ভিডিও-তে কখনও অ্যাপ্রন পরে তিনিই অভিনয় করেছেন ছোটবেলার সেই চিকিৎসকের ভূমিকায়। আবার কখনও তাঁকে দেখা গেছে তাঁর বাবার চরিত্রেও। আর ভিডিওটির একেবারে শেষে দেখা যায় এক হাতে ক্যামেরা, অন্য হাতে আন্তর্জাতিক সম্মাননার সার্টিফিকেট নিয়ে নৃত্যরত তিনি। ১৫ সেকেন্ডের ছোট্ট ভিডিও ক্লিপিংটিই এখন রীতিমতো ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়াতে। জয় করে নিয়েছে নেটিজেনদের মন।

এখানেই শেষ নয়। ‘সাউদার্থ অ্যাপালাচিয়া নেচার ফটোগ্রাফি’র পাশাপাশি হাস্টন একজন আন্তর্জাতিক ভ্রমণ লেখক। ধারাবাহিকভাবেই বিভিন্ন দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলির বিষয়ে ব্লগ লিখে চলেছেন বছর তেইশের মার্কিন তরুণ। আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফার্স অ্যাসোসিয়েশনের একজন অন্যতম সদস্যের পাশাপাশি তিনি ‘বিলাভেড, এমপাওয়ারিং উইমেন’ নামের একটি অলাভজনক সংস্থার পরিচালক। তাছাড়াও বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য ‘সানসাইন অ্যাম্বাসাডার’ নামের একটি নৃত্যগোষ্ঠীও প্রতিষ্ঠা করেছেন হাস্টন।

তবে আজকের দিনে দাঁড়িয়েও আমরা অনেকেই পরিচিত নই ‘ডাউন সিনড্রোম’-এর সঙ্গে। মানব দেহে অস্তিত্ব রয়েছে ২১ জোড়া ক্রোমোজমের— এমনটা সকলেই জানি আমরা। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিনগত সমস্যার জন্য আরও বাড়তি ২১টি ক্রোমোজমের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় মানবদেহে। এই বিশেষ অবস্থাকেই বলা হয় ডাউন সিনড্রোম। যা প্রভাবিত করে মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধিকে। তবে এই প্রতিকূলতাকেও যে পেরিয়ে যাওয়া সম্ভব, তারই নতুন করে পাঠ দিচ্ছেন হাস্টন ভ্যান্ডারগ্রিফ। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য, সাধারণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা। হাস্টনের এই রূপকথার লড়াই-ই বর্তমানে অনুপ্রাণিত করছে বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের…

আরও পড়ুন
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে তৈরি ক্যাফে, ধুঁকছে লকডাউনের পরেও

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
হুইলচেয়ারে বসেই ফটোগ্রাফি, ক্যামেরাকে সঙ্গী করে প্রতিবন্ধকতা জয় খড়গপুরের শুভ্র-র

More From Author See More