যেমন বেণী তেমনি রবে

‘আমার যেমন বেণী তেমনি রবে…’

অথচ, তেমনটা থাকার উপায় ছিল না এতদিন। সেনাবাহিনীর নিয়মকানুন এমনিতেই কড়া, তার ওপর চুলের স্টাইল! ভাবাও যেত না। তবে এখন থেকে মেয়েরাও যত্ন নিতে পারবেন কেশ সজ্জায়। আর সেই সূত্র ধরে ছেলেদের দাবি, তাহলে দাড়িই বা কী দোষ করল!

বাঙালির অন্দরমহলে উঁকি দিলে, কেশচর্চা একটা শিল্পই বটে। রবীন্দ্রনাথ থেকে আব্বাসউদ্দীন, ভারতচন্দ্র থেকে চর্যাপদে নারীর রূপ শোভা পায় তার কেশসজ্জায়। ঠাকুরবাড়িতেই উদ্ভাবন হয়েছিল খোঁপা বাঁধার নানা ঢং। স্বর্ণকুমারী দেবী, জ্ঞানদানন্দিনীদের কথাই ভেবে দেখুন একবার...

কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রের প্রসঙ্গ ওঠে, তাহলে? যুদ্ধক্ষেত্রে নারী! বছর ৭০-৮০ আগেও ব্যাপারটা অবাক-করা। কিন্তু সময় বদলেছে। পাল্টেছে ‘সৈনিক’ শব্দটির সংজ্ঞা। তবে যুদ্ধের কিছু আদি রীতিনীতি একই থাকবে, এ তো জানা কথাই। সেখানে একজন নারীকেও নিজেকে গড়ে নিতে হবে পুরুষেরই আদলে। পেশিবহুল শরীরে থাকবে না কোনো কমনীয়তা। প্রসাধন তো নয়ই। তেমনই চুলের ক্ষেত্রেও চলবে ছাঁটাই। সেনাবাহিনী মানে তো সকলের জন্য একই শৃঙ্খলা। একই আইন। 

আরও পড়ুন
নিয়ামগিরিতে বক্সাইট খনি স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, গ্রেপ্তার আদিবাসী নেত্রী কুনি সিকাকা

তবে এই ছবিটাও বদলাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে নতুন আইন লাগু হয়েছে সম্প্রতি। যে আইনে মেয়েদের কেশ সজ্জা নিয়ে কড়াকড়ি বেশ খানিক শিথিল। এর কারণটা কী? সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলায় নতুন প্রজন্ম ভয় পাচ্ছে। ইন্টারনেট-সর্বস্ব মিলেনিয়াল জেনারেশন চায় আরো খানিক মুক্তির স্বাদ। এছাড়া পুরুষ-শাসিত একটি প্রতিষ্ঠানে যে অপর-লিঙ্গের প্রতি বৈষম্য বাসা বাঁধবে, এ আর আশ্চর্য কী! পরিস্থিতি তাই ছিল এতদিন। নারীবিদ্বেষ তো রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছিলই,  উপরন্ত কোনো কোনো ক্ষেত্রে রূপান্তরকামীদের উপর এই বৈষম্য প্রকাশ পেয়েছে আক্রমণে। নিজেদের যৌনপরিচয় বা যৌনতাকে প্রকাশ করার স্বাধীনতাটুকু বন্দি নিয়মের খাঁচায়। তবে সরকার বদলানোর পাশাপাশি অন্য যৌনতার মানুষকেও খানিক আপন করে নিতে পেরেছে সেনাবাহিনী। 

১৯৭০ থেকে মার্কিন সেনাদলে মহিলাদের সংখ্যা ২ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ, হিস্প্যানিক এবং অন্যান্য প্রান্তিক বর্ণের মানুষও। সম্প্রতি তাঁদের মধ্যে থেকেই উচ্চ-পদস্থ এবং নিম্নপদস্থ কয়েকজন অফিসারদের নিয়ে গঠিত হয়েছে বিশেষ বেঞ্চ। তাঁরাই এনেছেন এনেছেন নতুন নিয়মকানুন। মহিলারা বিভিন্ন ধরণের হেয়ারস্টাইল রাখতে পারবেন। রং লাগাতে পারবেন চুলে। তবে তা অবশ্যই নিয়মাবলির গণ্ডিতে। 

আরও পড়ুন
এলজিবিটি অধিকারের পাশে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট, শুরু হল সচেতন কর্মশালা

আর এভাবেই চিড় ধরেছে অচলায়তনে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন অনেকেই। যেমন ক্যাপ্টেন জাওয়ানা ম্যাকফেডেন। তাঁর ঢেউখেলানো কোঁকড়া চুল প্রায়শই বাঁধতে হত বিশাল খোঁপায়। চুল বাগে আনতে তাই চলেছে হেয়ার জেল কিংবা গরম চিরুনি। এতে চুলের ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু তাকে বশ মানানো যায়নি। ফলে হেলমেট পরতে হিমশিম খেতেন ক্যাপ্টেন। কে না জানে, যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়মের একটু নড়চড় হলেই শেষ! তাই কেশ আগে না প্রাণ আগে, এই কঠিন দ্বন্দ্বের মুখে পড়ে চুল ছিঁড়ছিলেন জাওয়ানা। সম্প্রতি হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। 

তবে চুল তো বাঁচল। এবার দাড়ির কী হবে? সার্জেন্ট মেজর গ্রিনস্টন জানিয়েছেন, এই নতুন আইন আসার পরই তাঁর কাছে দরখাস্তের একটা ছোটখাটো পাহাড় জমে গিয়েছে। পুরুষ সৈনিকদের অনেকেই দাড়ি রাখার আবেদন জানিয়েছেন। ব্যাপারটি  বেশ গুরুত্ব সহকারেই বিবেচনা করছে মার্কিন সেনাবাহিনী। হয়তো চুলের পাশাপাশি একদিন দাড়িও তার যোগ্য আদর পাবে। 

আরও পড়ুন
সায়ান ও প্রান্তকথার যৌথ উদ্যোগ ‘রামধনুকথা’-এ কলকাতায় একত্র হলেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এলজিবিটি যুব আন্দোলন কর্মীরা

তবে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়মকানুন কি ভারতীয় সংস্কৃতি সাদরে গ্রহণ করতে পারবে? প্রশ্নটা হয়তো সেখানেই। 

সূত্র:  In a Changing Military, the Army Eases Its Rules for Women’s Hair by Dave Philipps, New York Times

Powered by Froala Editor