অতিমারীর মধ্যেই বাড়ছে উদ্বাস্তু-সংখ্যা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বোচ্চ

সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের জীবনযাত্রাকে আমূল বদলে দিয়েছে করোনা অতিমারী। বিশ্বব্যাপী মৃত্যুমিছিলের শরিক হয়েছে অনাহার আর দারিদ্র। আর এর মধ্যেই বেড়ে চলেছে উদ্বাস্তু মিছিল। সম্প্রতি জাতিপুঞ্জের রিফিউজি এজেন্সি থেকে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, বাধ্য হয়ে ঘরছাড়া হওয়া মানুষের সংখ্যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে। ২০২০ সালের শেষে সারা পৃথিবীতে মোট উদ্বাস্তুর সংখ্যা ৮২ মিলিয়নেরও বেশি।

বিগত ১০ বছরে একটু একটু করে বেড়েছে উদ্বাস্তুর সংখ্যা। ২০১২ সালের শেষে সংখ্যাটা ছিল ৪১ মিলিয়নের কিছু বেশি। ২০১৯ সালের শেষে তা দাঁড়ায় ৭৯.৫ শতাংশে। আর গত বছরের পরিসংখ্যান সেই রেকর্ডকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। পৃথিবীর প্রায় ১ শতাংশ মানুষই বাসস্থান হারিয়েছেন ইতিমধ্যে। আর তার জন্য বেশ কতগুলি বিষয়কে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য সবকিছুর মধ্যেও যুদ্ধ ও সীমান্ত সমস্যার কারণেই সবচেয়ে বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন বলে জানাচ্ছে রিপোর্ট। ২০১৯ সালে সীমান্ত সমস্যার কারণে উদ্বাস্তুর সংখ্যা ছিল ২০.৪ মিলিয়ন। আর ২০২০ সালে সেই সংখ্যাটা পৌঁছেছে ২০.৭ মিলিয়নে।

তবে সামগ্রিকভাবে অতিমারীর কারণে যুদ্ধের প্রকোপ কিছুটা কমেছে। বরং অর্থনৈতিক কারণেই বেড়েছে উদ্বাস্তু মিছিল। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে অতিমারীর কারণে বড়ো ধরণের অর্থনৈতিক ধস নেমেছে। সেইসঙ্গে বেশ কিছু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনাও ঘটেছে এই বছরে। অস্ট্রেলিয়া বা ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল থেকে শুরু করে ভারত মহাসাগরে একের পর এক ঘূর্ণিঝড় ও একাধিক বন্যার সাক্ষী থেকেছে মানুষ। এইসমস্ত বিপর্যয়ের ফলেও বাসস্থান ত্যাগ করে অন্যত্র জায়গা নিতে বাধ্য হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। কেউ গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি দিয়েছেন। আবার কেউ আশ্রয় খুঁজেছেন অন্য কোনো দেশে।

তবে উদ্বাস্তু সংখ্যা বাড়লেও শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষের সংখ্যা সেভাবে বাড়েনি। ২০১৯ সালের থেকে ২০২০ সালে নতুন শরণার্থীর সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ৪ হাজার। আর যাঁরা শিবিরে আশ্রয় পেয়েছেন, সেখানেও নূন্যতম করোনাবিধি মেনে চলে হচ্ছে না। জাতিপুঞ্জের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সমস্ত দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ মিত্রতা অত্যন্ত জরুরি। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর ৫০ শতাংশ দেশই হয় একে অপরের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে, অথবা তাদের মধ্যে সীমান্ত সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। যদিও এর মধ্যেও কিছু কিছু দেশের অবস্থান আশার আলো দেখাচ্ছে। সম্প্রতি আমেরিকা সরকার জানিয়েছে, আগামী ২ বছরে ১ লক্ষ ২৫ হাজার পর্যন্ত শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে প্রস্তুত তারা। আবার ভেনেজুয়েলার শরণার্থীদের বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কলোম্বিয়া সরকার। কিন্তু সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে আগামী বছরের মধ্যে সারা পৃথিবীতে উদ্বাস্তুর সংখ্যা ১০০ মিলিয়নের সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়।

আরও পড়ুন
যুদ্ধ, মহামারী, অভিবাসনে অশান্ত গোটা বিশ্ব; ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে মানব সভ্যতা?

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
আন্তর্জাতিক অভিবাসনের নিরিখে শীর্ষে ভারত, দেশছাড়া ১.৮ কোটি ভারতীয়

More From Author See More

Latest News See More