স্বাদে-সৌন্দর্যে মুগ্ধ রবীন্দ্রনাথ, নন্দলাল; ঐতিহ্যবাহী গয়না বড়ি এবার আপনার নাগালেও

কথায় বলে, লজ্জাই নারীর ভূষণ। তাঁদের নিজস্ব সৌন্দর্য আছে; যার টানে ছুটে গেছে কত রাজা-মহারাজা। ইতিহাস বলুন বা লোককথা, এমন সুন্দরের কাহিনির তো অন্ত নেই। আর সেই নারীর রূপই বেড়ে যায় অলংকারের বাহারে। সোনা হোক বা রুপো, কখনও আবার হিরে— হাজার হাজার বছর ধরে নারীকে সাজিয়ে তুলেছে এই অলংকার। আচ্ছা, সেই ‘গহনা’ই যদি আমার-আপনার পাতে এসে পড়ে? একেবারে টাটকা, হাতে গরম জিনিস!

এই ভাবনা থেকেই চলে আসি গহনা বড়ি বা গয়না বড়িতে। বাংলার খাদ্যশিল্প এবং তার ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। জয়নগরের মোয়া, কলকাতার রসগোল্লা— কত নাম মাথায় আসছে! আর সেই তালিকাতেই চলে আসবে গয়না বড়ি। ইংরেজ শাসন শুরুর আগেই বাংলার মা-ঠাকুমাদের হাতে প্রাণ পেত এই বড়ি। বিউলির ডাল ছিল যার মুখ্য উপাদান। ব্রিটিশরা আসার পর গয়না বড়িতে যোগ হয় পোস্ত। কখনও আবার সাদা তিলও ব্যবহার করা হয়। স্বাদও গেল বদলে; সবটা মিলিয়ে একটা সুন্দর, মুচমুচে ব্যাপার তৈরি হল বাংলায়… 

খানিক আগেই বলা হয়েছে খাদ্যশিল্পের কথা। সামান্য খাবার, সেটাই কখন ঐতিহ্য ও ইতিহাসের ধারক-বাহক হয়ে উঠেছে খেয়ালই পড়েনি! আর সেই ঢেউয়েই হাজির হল গয়না বড়ি। অন্যান্য বড়ি থেকে খানিক যেন আলাদা। স্বাদ আর আকার তো বটেই; সেইসঙ্গে হাজির হয়েছে বাহার। খুব সাবধানে, সতর্ক হয়ে নকশা তৈরি করা হয়। প্রত্যেকটি বড়ির অলংকরণ আলাদা, একটির সঙ্গে অন্যটি যেন মিশে না যায়। আর এই পুরো ব্যাপারটি নিয়েই স্বাধীনভাবে হাজির হল গয়না বড়ি। বাংলার চিরকালীন কুটির শিল্প নিজের ঐতিহ্য নিয়ে হাজির হল আমাদের সামনে। 

শুধু ঐতিহ্য নয়, ইতিহাসও এর সঙ্গী। সালটা ১৯৩০। শান্তিনিকেতন আলো করে বসে আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এমন সময় হাজির হলেন সেবা মাইতি নামের এক ছাত্রী। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন গয়না বড়ি। তাঁর মা হিরণ্ময়ী দেবী যত্ন করে রবি ঠাকুরের জন্য তৈরি করেছেন এই বড়ি। খাবারের এমন বাহার, এমন আয়োজন দেখে রীতিমতো মুগ্ধ গুরুদেব! এ তো নিছক বড়ি নয়, আবহমান সভ্যতার নকশা ফুটে উঠেছে এখানে! সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করলেন, এই গয়না বড়ি কলা ভবনে সংরক্ষণ করে রাখা হোক। এই বড়ি যে “কেবল দেখবার জন্য, খাওয়ার জন্য নয়।” শান্তিনিকেতন এভাবেই আপন করে নিল এই শিল্পকে; খাবার হিসেবে নয়, ভাস্কর্য হিসেবেই। পরে রবি ঠাকুরেরই পথ অবলম্বন করেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তাঁর ছাত্র নন্দলাল বসু। কেউই একে নিছক খাদ্যদ্রব্য বলতে রাজি নন। নন্দলাল তো একটি বইও প্রকাশ করেছিলেন গয়না বড়ি নিয়ে! মেদিনীপুরের বাড়ি বাড়ি যার অবাধ যাতায়াত, সেই গয়না বড়িই এবার স্পর্শ পেল শিল্পীমহলের। তৈরি হল ইতিহাস… 

আরও পড়ুন
এক প্লেটের দাম ২০ হাজার টাকা! ‘সোনায় মোড়া’ বিরিয়ানির গল্প

আজকের এই ইঁদুর দৌড়ের জগতে কারোরই সময় এবং ধৈর্য বলে বিশেষ কিছু নেই। আর আধুনিকতার এই বাজারে গিয়ে কোথাও হারিয়ে যেতে শুরু করেছে গয়না বড়িও। সম্প্রতি জিআই ট্যাগেরও দাবি উঠেছিল মহিষাদলের পক্ষ থেকে। তবে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। ইন্টারনেটের দৌলতে এই গয়না বড়ি আবারও সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে। মানুষজন উৎসাহিত হচ্ছেন, অনেকসময় নিজেরাও উদ্যোগী হয়ে পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করছেন। সেরকমই একটি সংগঠন হল ‘ফুড হাউস’। করোনা পরিস্থিতির পর দেশজ শিল্পকে ছড়িয়ে দেওয়ার একটা আওয়াজ উঠেছে গোটা দেশে। গ্রামে গ্রামে যে অনন্যসুন্দর জিনিসগুলি তৈরি হচ্ছে, সেগুলো যাতে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যায়, সেই লক্ষ্য নিয়েই পথ চলা শুরু হয়েছে ফুড হাউসের। মেদিনীপুরের সেই বিখ্যাত, আসল গয়না বড়িকে আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে বদ্ধপরিকর এরা। আপনিও স্বাদ নিয়ে দেখুন একবার। দেখবেন, কখন যেন নিজে থেকেই একটা ইতিহাসের সঙ্গে জুড়ে গেছেন।  

যদি কেউ ফুড হাউসের গয়না বড়ির স্বাদ নিতে চান, তাহলে যোগাযোগ করুন নিচের ঠিকানায়—

40A/14, KCC Mitra Street
Belgharia
Kolkata: 700056
Contact no/ Whatsapp No: 9874874420
ইমেল- [email protected]

আরও পড়ুন
থালায় উপচে পড়ছে বিরিয়ানি, শেষপাতে স্পেশাল জর্দা – ঢাকার ‘সুলতানি’ আপ্যায়ন

Powered by Froala Editor