পায়ে হেঁটে বিশ্বভ্রমণ, অনন্য নজির মার্কিন তরুণীর

ঘুরতে যেতে কার না ভাল্লাগে? আর বিশ্বভ্রমণ হলে তো কথাই নেই। অজানা দেশ বেড়িয়ে দেখার মধ্যে লুকিয়ে আছে এক অন্য আনন্দ। তবে যদি পায়ে হেঁটে ঘুরতে বলা হয় গোটা পৃথিবী? পিছিয়ে যাবেন সকলেই। বলবেন এ কাজ এক কথায় অসম্ভব। তবে এমন অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখালেন মার্কিন যুবতী অ্যাঞ্জেলা ম্যাক্সওয়েল (Angela Maxwell)। সাড়ে ছ’বছরের দীর্ঘ অভিযানের পর সম্প্রতি বাড়ি ফিরলেন তিনি।

আজ থেকে বছর আটেক আগের কথা। ২০১৩ সাল সেটা। একাই হেঁটে বিশ্বভ্রমণের (World Tour) পরিকল্পনা করেন অ্যাঞ্জেলা। কিন্তু কেন? স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। আজও হয়। বিশ্বভ্রমণের ইচ্ছে তো ছিলই, সেইসঙ্গে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করার তাগিদেই হেঁটে পৃথিবী ঘোরার পরিকল্পনা করেন অ্যাঞ্জেলা। পাশাপাশি কোনো যানবাহন না ব্যবহার করলে যে কার্বন ফুটপ্রিন্টকেও কমিয়ে আনা যাবে। পৃথিবীর অজানা প্রান্তে অচেনা মানুষদের সঙ্গে আলাপ করতেও বাড়তি কিছু সময়ও আসবে তাতে। 

যেমন ভাবনা তেমনই কাজ। বছর খানেকের মধ্যেই তোড়জোড় করে ফেলেন অ্যাঞ্জেলা। ছাড়েন মোটা মাইনের আইটি সেক্টরের কাজ। তারপরেই বেরিয়ে পড়া পথে পথে। সঙ্গী বলতে ছোট্ট একটি ঠেলা গাড়ি। তাতেই বছর খানেকের মতো প্রয়োজনীয় জামা, একটি মিলিটারি গ্রেড ওয়াটার ফিল্টার, কফি-নুডলস জাতীয় কিছু শুকনো খাবার, ল্যাপটপ, ব্যাটারি, তাঁবু ও অন্যান্য সরঞ্জাম বোঝাই করে অভিযানে নামেন অ্যাঞ্জেলা। 

বাড়ি থেকে বেরনোর আগে গোটা ট্যুরের একটি নীল-নকশা তৈরি করেই বেরিয়েছিলেন তিনি। তবে কয়েকদিন পর থেকে আর দরকার হয়নি তার। অ্যাঞ্জেলা সেইভাবে ম্যাপেরও সাহায্য নিতেন না। ‘যেদিকে দু’চোখ যায়’— সেই অতিপরিচিত প্রবাদবাক্যের মতোই পথ হেঁটেছেন তিনি। যেখানে যেখানে গেছেন সেখানকার সাধারণ মানুষদের সঙ্গে মিশেছেন, আয়ত্ত করেছেন আঞ্চলিক সংস্কৃতি। পাশাপাশি গোটা যাত্রাপথ জুড়ে ওয়ার্ল্ডস পার্লস, হার ফিউচার কোয়ালিশন-এর মতো নারী ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলির জন্য অনুদানও সংগ্রহ করেছেন অ্যাঞ্জেলা। সবমিলিয়ে নারী উন্নয়নের জন্য গড়ে তুলেছেন ৩০ হাজার মার্কিন ডলারের তহবিল।

আরও পড়ুন
৫৫০০ মাইল ভ্রমণ শেষে কবরের মুখে, কী এই টোটেম লাটামাট?

প্রায় ২০ হাজার মাইলের বেশি পথে একাধিকবার বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছেন অ্যাঞ্জেলা। অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমিতে প্রচণ্ড লু-তে প্রায় দগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। আক্রান্ত হয়েছিলেন হিটস্ট্রোকেও। ভিয়েতনামে তাঁর ওপর থাবা বসায় ডেঙ্গু। মঙ্গোলিয়ায় ধর্ষণেরও শিকার হন অ্যাঞ্জেলা। রাতে তাঁর তাঁবুতে আক্রমণ করেছিল এক নর্ম্যাড যাযাবর। তাছাড়া ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়েরও বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে অ্যাঞ্জেলার। 

আরও পড়ুন
মুজতবার ভ্রমণ, নেতাজি-অন্তর্ধান থেকে ‘বাঙালি বউ’-এর হত্যা : কাবুলের বঙ্গ-যোগ

ছ’বছরের অভিযান শেষে বাড়িতে ফিরলেও স্বাভাবিক জীবনে যেন মন বসছে না তাঁর। শুরু হয়ে গেছে আবার বেরিয়ে পড়ার পরিকল্পনা। তবে সবথেকে বড়ো কথা তাঁর এই ‘যাযাবর’ জীবনই ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে তরুণ প্রজন্মের ওপরেও। একটা সময় ফিওনা ক্যাম্পবেল, রবিন ডেভিডসন, রোসি সোয়েল-পোপের মতো মহিলা অভিযাত্রীদের গল্প পড়েই অনুপ্রাণিত হতেন অ্যাঞ্জেলা। এখন স্বয়ং তিনিই যেন অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন মহিলাদের… 

আরও পড়ুন
মাত্র দু’সপ্তাহে ৭৪০০ মাইল ভ্রমণ কোকিলের, বিস্মিত পক্ষী বিশেষজ্ঞরা

Powered by Froala Editor