হত্যাকারীর শেষ বাক্য থেকেই জন্ম নিয়েছিল নাইকির স্লোগান ‘জাস্ট ডু ইট’

‘জাস্ট ডু ইট’। আলাদা করে বলে দিতে হয় না। অতিপরিচিত এই শব্দবন্ধ শুনলেই এক ঝলকে উঠে আসে পৃথিবীর এক নম্বর স্পোর্টস ম্যানুফ্যাকচারার ব্র্যান্ড ‘নাইকি’-র ছবি। এক কথায় এই স্লোগানই কিংবদন্তি করে তুলেছে নাইকিকে। তবে অনুপ্রেরণা-মূলক এই শব্দবন্ধের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে এক অন্য কাহিনি।

সালটা ১৯৭৬। যুক্তরাষ্ট্রের ইউটা প্রদেশের একটি গ্যাস স্টেশনে ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা। গ্যারি গিলমোর নামের এক ব্যক্তি গাড়িতে গ্যাস ভরেও অর্থমূল্য দিতে অস্বীকার করে। পাম্পের এক আধিকারিকের সঙ্গে শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। তারপর রাতের অন্ধকারেই সেই আধিকারিক-সহ এক মোটেল-কর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন গ্যারি গিলমোর। 

ঘটনার বিবরণ কিছুদিন পরে জানতে পেরে গ্যারির ভাই-ই পুলিশের খাতায় লিখিয়েছিলেন অভিযোগ। তার ভিত্তিতেই গ্রেপ্তার হন গিলমোর। পুলিশের তদন্তে মেলে তথ্যপ্রমাণও। জানা যায় আরও বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও যোগ রয়েছে তাঁর। বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে। আদালতের রায়ে তিন মাস হাজতবাসের পর ১৯৭৭ সালের ১ জানুয়ারি ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। মৃত্যুর আগে তাঁর থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল শেষ ইচ্ছার কথা। নাহ্‌, শেষ ইচ্ছার কথা জানাননি গিলমোর। শেষ মুহূর্তেও চোয়াল শক্ত রেখেছিলেন আর পাঁচটা দুঁদে খুনিদের মতোই। শক্ত কণ্ঠে বলে উঠেছিলেন ‘লেট’স ডু ইট’। সেই খবর রাতারাতি সাড়া ফেলে দিয়েছিল ইউটা তো বটেই, সারা যুক্তরাষ্ট্রে। ছাপা হয়েছিল প্রায় সমস্ত প্রথমসারির সংবাদপত্রেই।

এর ১১ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর নাইকির দপ্তরে বিজ্ঞাপন আধিকারিক হিসাবে দায়িত্ব নেন ড্যান উইডেন নামের এক ব্যক্তি। তাঁর ওপরেই ভার দেওয়া হয় বিপণনের জন্য নতুন কোনো আকর্ষনীয় স্লোগান তৈরির। খুব বেশি ভাবতে হয়নি উইডেনকে। গিলমোর শেষ কথাগুলোকেই নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। বা বলা ভালো মাত্র একটি শব্দকে পাল্টে ফেলেছিলেন উইডেন। তাঁর হাত ধরেই ‘লেট’স ডু ইট’ হয়ে যায় ‘জাস্ট ডু ইট’।

১৯৮৮ সালে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম প্রকাশিত হয় এই স্লোগানটি। অডিও-ভিসুয়াল একটি ফিল্মে দেখানো হয় ৮০ বছরের এক বৃদ্ধ ওয়াল্ট স্ট্যাক দৌড়ে যাচ্ছেন গোল্ডেন গেট ব্রিজের ওপর দিয়ে। তাঁর মুখ থেকেই শোনা যায় ‘জাস্ট ডু ইট’ বাক্যাংশটি। বলাই বাহুল্য, কিছুদিনের মধ্যেই আন্তর্জাতিক ট্রেডমার্কে পরিণত হয়েছিল সেই কথা। যা তিন দশক পেরিয়ে এসেও আজ অপরিবর্তিত। 

তবে নাইকি কোনোদিনই চায়নি এই শব্দবন্ধের উৎস প্রকাশ্যে আনতে। পরবর্তীকালে নাইকিরই প্রাক্তন বিপণন প্রধান লিজ ডোলান স্বীকার করেন এই ঘটনা। একজন খুনি, অপরাধীর প্রচার করা হচ্ছে ভেবেই সেদিন পিছিয়ে গিয়েছিলেন নাইকির কর্মকর্তারা। সেদিন তা প্রকাশ পেলে আইনি সমস্যায় পড়তে হত কিনা, সাধারণের কাছে নাইকির ভাবমূর্তিই বা কেমন হত, সেসব পরের কথা। কিন্তু হিংস্রতায় ভরা নৃশংস, ঔদ্ধত্বপূর্ণ সেই কথা অনুপ্রেরণাদায়ক হয়ে উঠতে পারত কি কোনোদিন? জানা নেই!

আরও পড়ুন
দুই ভাইয়ের বিবাদেই জন্ম পুমা এবং অ্যাডিডাসের, ‘রাইভালরি’ ভেঙেছিল জার্মানির শহরকেও

Powered by Froala Editor