নিজের আবিষ্কারের ওপরেই বিরক্ত এডিসন, নাম দিলেন ‘লিটল মনস্টার’

ঘরের কোণে ছোট্ট একটা পুতুল। হঠাৎ তার মুখ থেকেই বেরিয়ে এল ছোটোদের মন ভোলানো কোনো ছড়া। আজকের শিশুদের কাছে ব্যাপারটা নেহাতই মজার। এখন তো মোবাইল ফোনেই এমন কত প্রোগ্রাম পাওয়া যায়। কিন্তু আজ থেকে মাত্র ১৩০ বছর আগেই এমনটা কল্পনা করাও বেশ কঠিন ছিল। শুধু তাই নয়, ক্রেতারা আগ্রহ করে এই পুতুল ঘরে নিয়ে গেলেও শেষে রীতিমতো ভয় পেয়েই আবার ফিরিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। একজন দুজন নন, প্রায় প্রত্যেক ক্রেতাই ভয় পেয়েছেন। আর তাঁদের যিনি ভয় পাইয়েছেন, সেই মানুষটি আর কেউ নন, প্রযুক্তি বিজ্ঞানের প্রবাদপুরুষ টমাস আলভা এডিসন।

১৮৯১ সাল। বোস্টন শহরের হোরাস প্যাট্রিজ অ্যান্ড কোং-এর কর্ণধার একটি চিঠি লিখলেন বিজ্ঞানী এডিসনকে। এর কিছুদিন আগেই এই দোকান থেকে পুতুল কিনে নিয়ে গিয়েছেন ২২ জন ক্রেতা। দোকানের মালিক চিঠিতে লিখছেন, অনেকেই পুতুলের গঠনগত ত্রুটির কথা বলছেন। এমনকি শব্দ চালু করার হাতল ভেঙে গিয়েছে অনেকের। তবে এসবই মামুলি অভিযোগ। দোকানে বসেই সেসব সারিয়ে দেওয়া যায়। বেশিরভাগ ক্রেতার অভিযোগ, এই পুতুল আসলে ভয়ঙ্কর। পুতুলের মুখ থেকে হঠাৎ ছড়া বেরিয়ে আসতে শুনে ছোটোরা না হলেও বড়োরা ভয় পেয়েছিলেন নির্ঘাৎ।

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে সফল প্রযুক্তিবিদ হিসাবে স্বীকৃত টমাস এডিসন। তবে ব্যর্থতা তাঁর জীবনেও এসেছে। সেইসব ব্যর্থতাকে অবশ্য পাত্তা দিতে রাজি ছিলেন না এডিসন। তিনি তাঁর নোটবুকে লিখেছিলেন, তাঁর অন্তত ১০ হাজার রকমের পরিকল্পনা বাস্তবে কাজ করেনি। তবে সেইসব ব্লুপ্রিন্ট থেকেই তৈরি হয়েছে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা। কিন্তু যে মানুষ জীবনের সমস্তকিছুকে এভাবে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে শিখেছিলেন, তিনিই রীতিমতো বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন এই পুতুল নিয়ে। একসময় এদের নাম রেখে বসলেন ‘লিটল মনস্টার’।

ফোনোগ্রাফ যন্ত্রের আবিষ্কারক হিসাবে ততদিনে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন এডিসন। সেই যন্ত্রকেই আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে এই পুতুলের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন এডিসন। পুরো প্রক্রিয়াটা সহজ ছিল না একেবারেই। সেকালের মিনিয়েচার যন্ত্র! এডিসনের কাছে এ ছিল এক চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ অবশ্য জিতেছিলেন এডিসন। মোমের প্রলেপ দেওয়া মিনি ক্যাসেটের মধ্যেই রেকর্ড করা হল ছড়া। একটি ক্যাসেট নয়। কারণ ছোটো একটি ক্যাসেটে বড়জোর ২০ সেকেন্ডের রেকর্ডিং হতে পারে। একটার পর একটা ক্যাসেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরপর বাজানোর ব্যবস্থাও হল। বাছাই করা হল ২২টি ছড়াও। এইসব ছড়া আবৃত্তি করার জন্য ১৮ জন কণ্ঠশিল্পীকে জোগাড় করেছিলেন এডিসন। রীতিমতো ধুমধাম করে তৈরি হল ফোনোগ্রাফ পুতুল। প্রযুক্তির জগতে সে এক বিরাট সাফল্য।

তবে বাজার দখল করতে গেলে প্রযুক্তির সঙ্গে একটু শিল্পের মেলবন্ধন প্রয়োজন ছিল। একে তো বেশিরভাগ পুতুলের শরীরে কোনো পোশাক পরাননি এডিসন। যাদের পোশাক পরিয়েছেন, তাও যৎসামান্য। এমন পুতুলের মুখ থেকে হঠাৎ শব্দ বেরিয়ে এলে ভয় তো লাগবেই। আর এই সামান্য কারণেই বিরাট পুঁজি নিয়ে নামা ব্যবসায় হঠাৎ ভরাডুবি হল। পুনরায় গবেষণার জগতে ফিরতেও বেশ কয়েক বছর সময় লেগে গেল এডিসনের। যদি সঙ্গে একজন প্রোডাক্ট ডিজাইনারকে নিতেন, হয়তো এমন ভরাডুবি হত না তাঁর।

Powered by Froala Editor