আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, ভবিষ্যতের পথ দেখাচ্ছে তামিলনাড়ুর প্রত্যন্ত গ্রাম

দেশজুড়ে যত জনসংখ্যা বাড়ছে, ততই পরিধি বাড়াচ্ছে জনপদ। ফুরিয়ে আসছে ফাঁকা মাঠ, উন্মুক্ত জমি। ফলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। একদিকে যেমন দ্রুত হারে কমছে ডাম্পিং গ্রাউন্ড, তেমনই জৈব এবং অজৈব বর্জ্যের দৌরাত্ম্যে বাড়ছে সমুদ্র দূষণ। এবার এই কঠিন চ্যালেঞ্জেরই সহজ সমাধান দিল তামিলনাড়ুর প্রত্যন্ত একটি গ্রাম। আবর্জনার সমস্যা মেটাতে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, তৈরি করল অনন্য নজির।

কথা হচ্ছে তামিলনাড়ুর শিবগঙ্গা জেলার কাঞ্জিরঙ্গাল গ্রামের। ছোট্ট এই গ্রামে বসবাস ১৪ হাজার মানুষের। তবে পরিসংখ্যান অনুযায়ী কয়েক হাজার পরিবার থেকেই কাঞ্জিরঙ্গালে তৈরি হত দৈনিক ৫০০ কেজি আবর্জনা। এদিকে জনবসতি বাড়ায় ক্রমশ কমে আসছিল ডাম্পিং গ্রাউন্ডের আয়তন। দূষণ তো বটেই, আবর্জনার দুর্গন্ধে টেকাই দায় হয়ে পড়েছিল গ্রামবাসীদের।

বছর কয়েক আগে এই সমস্যারই অভিনব সমাধান খুঁজে দেন জেলা কালেক্টর মধুসূদন রেড্ডি। প্রস্তাব দেন আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের। গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গে আলোচনার পর ন্যাশনাল রারবান প্রকল্পের আওতায়, গ্রামে স্থাপিত হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ইউনিট। অভিনব এই ইউনিট স্থাপনে ৬৫ লক্ষ টাকা খরচ হলেও, বদলে গেছে গ্রামের চেহারা।

গ্রাম পঞ্চায়েত সভাপতি কেএসএম মনিমুত্থু জানাচ্ছেন, প্রতি বছর গ্রামের রাস্তা এবং গার্হস্থের বিদ্যুতের জন্য খরচ হত প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। তার অনেকটাই উঠে আসছে এই নতুন প্রকল্প থেকে। হিসাব বলছে, ২ টন বর্জ্য থেকে প্রতিদিন ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। বর্তমানে উৎপাদিত হয় ০.৫ টন বর্জ্য। আগামীতে পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকেও আবর্জনা সংগ্রহ করলে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ অনেকটাই বাড়বে। পার্শ্ববর্তী পৌরসভার সঙ্গেও এই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে কথাবার্তা। 

আরও পড়ুন
কারখানার বর্জ্যে রক্তলাল হুগলির নদী, অসহায় গ্রামবাসীরা

অন্যদিকে বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহের জন্য বিশেষ কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। তাতে খানিকটা হলেও মিলেছে বেকারত্বের সমাধান। অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর বর্জ্যের অবশিষ্টাংশ থেকে সার তৈরি করছে গ্রাম পঞ্চায়েত। যা স্থানীয় বাজারে স্বল্প মূল্যে তুলে দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের হাতে। সেদিক থেকেও আয় বেড়েছে গ্রামের। পঞ্চায়েতের বাড়তি এই উপার্জন পরবর্তীতে গ্রামোন্নয়নে কাজে লাগানো হবে বলেই জানাচ্ছেন পঞ্চায়েত সভাপতি। 

আরও পড়ুন
নদী থেকে বর্জ্য সরাতে ক্লান্তিহীন ‘মিস্টার ট্র্যাশ হুইল’, রয়েছেন মিসেসও!

শুধু তামিলনাড়ুই নয়, বর্তমানে ভারতের উন্নত শহরগুলিতেও অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে আবর্জনার ব্যবস্থাপনা। সেখানে দাঁড়িয়ে কাঞ্জিরঙ্গলই পথ দেখাচ্ছে আগামী দিনের। এখন দেখার প্রত্যন্ত গ্রামের এই মডেলকে কতটা কাজে লাগাতে পারে অন্যান্য রাজ্যের প্রশাসন…

আরও পড়ুন
রাষ্ট্রনায়কদের আদলে পাহাড়! ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য দিয়ে তৈরি 'মাউন্ট রিসাইকেলমোর'

Powered by Froala Editor