রাষ্ট্রনায়কদের আদলে পাহাড়! ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য দিয়ে তৈরি 'মাউন্ট রিসাইকেলমোর'

আমেরিকার বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্রগুলির কথা বলতে গেলে তালিকার একেবারে গোড়াতেই আসবে মাউন্ট রাশমোর। পাহাড় কেটে খোদাই করা আমেরিকার ৪ জন প্রেসিডেন্টের প্রতিকৃতি দেখতে প্রতি বছর ভিড় জমান লক্ষ লক্ষ মানুষ। সেই পাহাড়ের আদলেই এবার তৈরি হল আরও এক অভিনব ভাস্কর্য। তার নাম মাউন্ট রিসাইকেলমোর। নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এই ভাস্কর্যের বিশেষত্ব। আসলে এখানে প্রতিকৃতিগুলি তৈরি হয়েছে নানা ধরণের ইলেক্ট্রনিক আবর্জনা জুড়ে জুড়ে। জি-৭ সম্মেলনের কথা মাথায় রেখেই পৃথিবীর নানা দেশের রাষ্ট্রনায়কদের মুখের প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়েছে এই রিসাইকেল পদ্ধতিতেই। আসলে সম্মেলনে প্রতিটা দেশ যেন ইলেক্ট্রনিক আবর্জনা পুনর্ব্যবহারের বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থান নেন, সেই আবেদন রাখতেই তৈরি করা হয়েছে এই ভাস্কর্য।

ব্রিটিশ বিনোদন সংস্থা মিউজিক-ম্যাগপাই-এর হয়ে এই বিরাট ভাস্কর্যটি তৈরি করেছেন শিল্পী জো রাশ। তবে এই মূর্তি কোনো স্থায়ী মূর্তি নয়। জি-৭ সম্মেলনের আগে মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্যই এই মূর্তিগুলি তৈরি করা হয়েছে। এরপর মূর্তিটি টিকিয়ে রাখতে গেলে যথেষ্ট রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন পড়বে বলেই মনে করছেন শিল্পী। ইংল্যান্ডের কনওয়াল পাহাড়ের উপর ক্রাবিস হোটেলের ঠিক উল্টোদিকে তৈরি হয়েছে এই মূর্তি। জো রাশ জানিয়েছেন, এই মাসের শেষদিক থেকেই কনওয়াল পাহাড়ে ট্রেকিং-এর জন্য ভিড় জমাবেন বহু মানুষ। তাঁদের চোখে পড়বে এই মূর্তি। সেখানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে আছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়েশোহিদে সুগা, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ইমান্যুয়েল ম্যাক্রন, ইতালির মারিও দ্রাঘি, কানাডার জাস্টিন ট্রুডো, জার্মানির অ্যাঞ্জেলা মার্কেল এবং অবশ্যই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

জাতিপুঞ্জের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে সারা পৃথিবীতে জমা হয়েছে ৫৩ মিলিয়ন টন ইলেক্ট্রনিক আবর্জনা। ২০১৪ সালে পরিমাণটা ছিল ৪৪ মিলিয়ন টন। প্রতি বছর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ইলেক্ট্রনিক আবর্জনার পরিমাণ। পরিবেশবান্ধব নানা গ্যাজেটেও ইলেক্ট্রনিক প্রযুক্তি অপরিহার্য। কিন্তু তা উপযুক্তভাবে পুনর্ব্যবহার না করলে পরিবেশের সমূহ বিপদ ঘটতে বাধ্য। বিশেষ করে সিলিকনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আণুবীক্ষণিক থেকে স্তন্যপায়ী সমস্ত স্তরের প্রাণী এবং উদ্ভিদ। মাউন্ট রিসাইকেলমোর তৈরিতে মোট আবর্জনার অতি সামান্য এক ভগ্নাংশ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু সেই দানবিক স্তূপও বুঝিয়ে দেয়, পরিস্থিতি কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে চলেছে। আশা করা যায়, জি-৭  সম্মেলনে এই সমস্যার ইতিবাচক সমাধানের কথা ভাববেন সমস্ত দেশের রাষ্ট্রনায়করাই।

Powered by Froala Editor