হগওয়ার্টসে বিবাহ, মেটাভার্সের অভিনব ব্যবহার ভারতে

পাত্রের পরনে ধুতি-পাঞ্জাবি। মাথায় বাহারি পাগড়ি। পাত্রী পরেছেন শাড়ি। ধুমধাম করেই হচ্ছে বিবাহ। আমন্ত্রিত লোকজনের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু মানুষের ভিড়ে ওরা কারা? আপাদমস্তক কালো চাদরে মোড়া তাদের শরীর। মাটি থেকে খানিকটা ওপরে শূন্যেই ভেসে বেড়াচ্ছে তারা। ভূত নাকি! খানিকটা তাই। আসলে ওরা উইজার্ড। আর বিবাহানুষ্ঠানের জায়গাটা চিনতে পেরেছেন নিশ্চয়ই? এটাই সেই অতিপরিচিত হগওয়ার্টস। হ্যারি পটারের স্কুল। 

হ্যাঁ, অবাক লাগলেও এমনটাই সত্যি। এবার হ্যারি পটারের সেই রূপকথার গল্পের প্লটেই বিবাহ হতে চলেছে তামিলনাড়ুর (Tamil Nadu) দুই তরুণ-তরুণীর। আর এই রূপকথাকে বাস্তবতার রূপ দিয়েছে প্রযুক্তি। এই প্রথম মেটাভার্সের (Metaverse) ব্যবহারে ভারতে আয়োজিত হতে চলেছে এমনই এক অভিনব বিবাহানুষ্ঠান (Reception)। বিশ্বের অন্য কোনো দেশও এর আগে এমন বিবাহ দেখেছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে যথেষ্ট।

তামিলনাড়ুর বাসিন্দা দীনেশ এসপি এবং জনগানন্দিনী রামস্বামী উভয়েই প্রযুক্তিবিদ। আরও বিশেষভাবে বলতে গেলে পাত্রী জনগানন্দিনী নিজেই একজন প্রোগ্রামার। বছর চারেক আগে তাদের আলাপ হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়াতে। সেখান থেকেই গড়ে ওঠে সম্পর্ক। বিবাহের তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছিল বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। কিন্তু করোনাকালীন পরিস্থিতিতে সংক্রমণের ভয়ে সমস্ত বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়সজনদের নিমন্ত্রণ করাই দায় হয়ে উঠেছে এখন। বিকল্পের অনুসন্ধান করতে গিয়েই ভার্চুয়াল বিবাহানুষ্ঠানের কথা চিন্তাভাবনা করেন দীনেশ। প্রেয়সী খানিকটা চমক দিতে, তাঁকে না জানিয়েই বন্দোবস্ত করে ফেলেন মেটাভার্সের। 

মাদ্রাস আইআইটি এবং ব্লকচেন মেটাভার্সের যৌথ উদ্যোগেই আগামী ৬ তারিখ আয়োজিত হতে চলেছে এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান। তামিলনাড়ুর শিবলিঙ্গপুরম গ্রামে এই বিবাহ হলেও, মেটাভার্সের দুনিয়ায় অকুস্থলটি হল হগওয়ার্টস স্কুল। দু’জনেই হ্যারি পটারের ভক্ত হওয়ায় এমনই এক ‘ব্যাঙ্কোয়েট’ বেছে নিয়েছেন দীনেশ। 

আরও পড়ুন
কপালে বন্দুকের ঠেকিয়ে ‘পাকড়ুয়া বিবাহ’, শিকার বিহারের হাজার হাজার যুবক

তবে এখানেই চমকের শেষ নেই। বছর দুয়েক আগেই প্রয়াত হয়েছিলেন জনগানন্দিনীর বাবা। প্রযুক্তির দৌলতে তিনিও ‘হাজির’ থাকবেন বিবাহানুষ্ঠানে। কন্যা সম্প্রদানও করবেন তিনিই। আর সেই উইজার্ডরা, যাদের কথা হচ্ছিল শুরুতেই? তারা আদতে দীনেশ ও জনগানন্দিনীর পটারহেড বন্ধুবান্ধব। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় রূপকথার অংশ হয়ে উঠবেন তাঁরাও। এমন বেশেই দেখা যাবে পুরোহিতকেও। অবশ্য আমন্ত্রিত অন্যান্যদের জন্য থাকবে পছন্দসই অবতার বেছে নেওয়ার সুবিধা। নবযুগলকে কেউ উপহার দিতে চাইলে শরণাপন্ন হতে হবে গুগল-পে কিংবা ভাউচারের। আর ভুরিভোজ? সেটার জন্য অন্য কোথাও যেতে হবে না আমন্ত্রিতদের। বাড়িতে বসেই খাবারের ডেলিভারি পেয়ে যাবেন তাঁরা। 

আরও পড়ুন
প্রেমিককে বিবাহের জন্য রাজপরিবার ছাড়লেন জাপানের রাজকন্যা

এমন অভিনব বিবাহানুষ্ঠান চাক্ষুষ না করতে পারায় আক্ষেপ হচ্ছে নাকি? দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি রিসেপশনের পরেই এই বিবাহের ভিডিও-ও চলে আসবে ইউটিউবে। চাইলে সাক্ষী থাকতে পারবেন আপনিও। সবমিলিয়ে সমস্ত আঙ্গিকেই তামিলনাড়ুর এই বিবাহ যেন প্রযুক্তির দুনিয়ায় এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করতে চলেছে। পথ দেখাতে চলেছে আগামীকে… 

আরও পড়ুন
সমলিঙ্গ বিবাহে স্বীকৃতি সুইৎজারল্যান্ডের

Powered by Froala Editor