‘বৃহত্তম’ হিমবাহের গলনে সমুদ্রে মিশেছে ১ ট্রিলিয়ন টন জল, চাঞ্চল্যকর তথ্য গবেষণায়

২০১৭ সালের কথা। আন্টার্কটিকার বরফের চাদর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জন্ম নিয়েছিল প্রকাণ্ড এক হিমবাহ। যার আয়তন প্রায় সিকিমের সমান। ‘এ৬৮’ বৈজ্ঞানিক নাম হলেও, প্রকাণ্ড এই হিমবাহকে ‘মেগাবার্গ’ হিসাবেই পরিচয় দিয়েছিলেন গবেষকরা। তৎকালীন সময়ে সাময়িকভাবে বিশ্বের বৃহত্তম হিমবাহও ছিল মেগাবার্গ (Megaberg)। কিন্তু সময়ের সঙ্গে দ্রুত গলতে থাকে মেগাবার্গ। ২০২১ সালের শুরুতেই ঘনিয়ে আসে তার ‘মৃত্যু’। এবার তার সম্পর্কেই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আনলেন গবেষকরা। এই হিমবাহের গলন প্রতিদিন গড়ে প্রায় দেড় বিলিয়ন টনেরও বেশি জল যোগ করেছে সমুদ্রে। 

হ্যাঁ, এমনই ভয়াবহ তথ্য উঠে আসছে সাম্প্রতিক গবেষণায়। মেগাবার্গের মৃত্যুতে সবমিলিয়ে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন টন বরফ গলেছে মাত্র ৪ বছরে। যা এক বছরের জন্য গোটা পৃথিবীর মানুষের মিষ্টি জলের চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু এত দ্রুত কেন ক্ষয় হল এই হিমবাহের? পরিবেশের ওপর তার প্রভাবই বা কী?

লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানাচ্ছেন, আন্টার্কটিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর মেগাবার্গ ধীরে ধীরে গতিশীলতা পায় দক্ষিণ মহাসাগরের ঘূর্ণায়মান সমুদ্রস্রোতের প্রভাবে। ক্রমশ মেরু থেকে বাড়তে থাকে তার দূরত্ব। দক্ষিণ জর্জিয়ার ব্রিটিশ ওভারসিজ টেরিটরির কাছে পৌঁছাতে, স্থানীয় জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হয় মেগাবার্গ। তুলনামূলক উষ্ণ আভাওয়ায় শুরু হয় চরম হারে বরফ গলন। ঘনিয়ে আসে তার মৃত্যু। 

ধারাবাহিকভাবে বরফ গলনের হার তো বৃদ্ধি পাচ্ছিলই। ব্যাপক মাত্রায় হিমশীতল মিষ্টি জল সমুদ্র মেশায় বদল হয়েছিল সমুদ্রস্রোতের প্রকৃতি। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাণ্ড এই হিমবাহ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় অসংখ্য বরফখণ্ডে। গবেষকদের অনুমান এই ধরনের বরফখণ্ডগুলি ব্যতিব্যস্ত করে তুলছে মেরু অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রকে। মূল হিমবাহটির গভীরতা ছিল প্রায় ১৫০ মিটারের কাছাকাছি। মেগাবার্গের গলনে তৈরি বরফখণ্ডগুলির গভীরতাও প্রায় তার কাছাকাছিই। সম্প্রতি রোবোটিক্স গ্লাইডারের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে গবেষকরা জানাচ্ছেন এই ধরনের ভাসমান বরফের খণ্ডগুলির জন্য গতিরুদ্ধ হচ্ছে তিমি, পেঙ্গুইন, শীল ও অন্যান্য প্রাণীদের পরিযায়ন। পাশাপাশি বরফের মধ্যে হিমায়িত অবস্থায় থাকা অসংখ্য অণুজীব প্রজাতিও মিশেছে সমুদ্রে। যা ধীরে ধীরে বদলে ফেলছে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের প্রকৃতিকে। যা যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয় বলেই মনে করছেন গবেষকরা। 

তবে তাঁদের বিশ্বাস, এখানেই সীমাবদ্ধ নেই মেগাবার্গ গলনের কুপ্রভাব। আগামীতে আরও বিস্তারিত অনুসন্ধান চালাবেন লিডসের অধ্যাপকরা। তবে সবথেকে বড়ো আশঙ্কার বিষয় হল, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে মেগাবার্গের মতো অজস্র হিমবাহ তৈরির প্রবণতা বা সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে আন্টার্কটিকায়। আর তা বাস্তবে রূপান্তরিত হলে নিচিহ্ন হয়ে যেতে পারে মানব সভ্যতা। গোটা পৃথিবীই ডুবে যেতে পারে জলের তলায়…

Powered by Froala Editor