খেলেছেন বিশ্বকাপ ফাইনালও, পেটের দায়ে বাস চালাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার তারকা স্পিনার

সুরয রণদীভ। নামটা চেনা চেনা লাগছে নিশ্চয়ই? লাগারই কথা। ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে খেলেছিলেন শ্রীলঙ্কার এই ডানহাতি অফ-স্পিনার। উইকেট না পেলেও ইকোনমি বজায় রেখে বেশ কড়া চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন ধোনি-বাহিনীর দিকে। ১০ ওভারে দিয়েছিলেন মাত্র ৪৩ রান। শ্রীলঙ্কার সেই ক্রিকেট তারকাই এখন পেটের দায়ে বাস চালাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে। ট্রান্সডেভ নামে একটি ফরাসি সংস্থার হয়েই এই কাজ করছেন তিনি।

শ্রীলঙ্কার অন্যতম যুব-তারকা হিসাবে রণদীভের উত্থান হয়েছিল শূন্য দশকে। জাতীয় শিবিরের অনূর্ধ্ব ১৫, অনূর্ধ্ব ১৯ এবং অনূর্ধ্ব ২৩ দলে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কান স্পিনার। এমনকি ২০০৩-০৪ এর অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কার হয়ে মাত্র ৪ ম্যাচে সংগ্রহ করেছিলেন ২৩টি উইকেট। 

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ২০০৯ সালে। ভারতের বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজে মুথাইয়া মুরলীধরনের বিকল্প হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল তাঁকে। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের উল্লেখযোগ্য তিনটি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন রণদীভ। সেই ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেটে শ্রীলঙ্কার কাছে হার মেনেছিল ভারত। তাছাড়াও সব মিলিয়ে ১২টি টেস্ট ম্যাচে শ্রীলঙ্কার হয়ে ৪৩টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। ৩১টি ওয়ান-ডে এবং ৭টি টি-২০ ম্যাচে সংগ্রহ যথাক্রমে ৩৬টি ও ৭টি উইকেট।

২০১০ সালে ভারতের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন সুরয রণদীভ। জেতার জন্য মাত্র ১ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের। ক্রিজে টিকে থাকা বীরেন্দ্র সহবাগের স্কোর তখন ৯৯। তবে শেষ বলে ৬ মারার পরেও শতরান করা হয়নি তাঁর। নো-বল হিসাবে সেটিকে ঘোষণা করেছিলেন আম্পায়ার। পরবর্তীকালে সহবাগের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিলেন রণদীভ। জানিয়েছিলেন, ইচ্ছাকৃতভাবেই নো-বল করেছিলেন তিনি। তারপরেই শ্রীলঙ্কার বোর্ড এক ম্যাচের জন্য নির্বাসনে পাঠায় তাঁকে। পরবর্তীতে জাতীয় স্কোয়াডেও অনিয়মিত হয়ে যায় তাঁর উপস্থিতি। যদিও শেষ পর্যন্ত জানা গিয়েছিল, তিলেকারন্তে দিলশনই তাঁকে এই উপদেশ দিয়েছিলেন মাঠে।

আরও পড়ুন
৪৯ বছর বয়সে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক! আজও অক্ষত ১৮৭৭ সালের সেই রেকর্ড

আইপিএল-এ চেন্নাইয়ের হয়ে দুই মরশুম খেলার পর আয়ারল্যান্ডে কয়েকটি পেশাদার ক্রিকেট টুর্নামেন্ট খেলেন রণদীভ। ২০১৬ সালে প্রায় ৩ বছর পর জাতীয় দলে সুযোগ মিললেও মাত্র ১টি ম্যাচেই খেলতে পেরেছিলেন তিনি। তারপর ইতি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ারেও। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার হয়েই স্থানীয় এক ক্লাবের হয়ে ছোটো-খাটো ঘরোয়া টুর্নেমেন্টে অংশ নেন সুরয রণদীভ। তবে সেই আয়ে সংসার চলে না। তাই বিকল্প হিসাবে বাস-চালকের ভূমিকাতেই নেমেছেন তিনি। 

সম্প্রতি বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার দলকে প্রস্তুতির জন্য তাঁর কাছে আহ্বান জানিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড। সুযোগ হাতছাড়া করেননি তিনি। নেট প্র্যাকটিস করিয়েছিলেন অজি-তারকাদের। 

আরও পড়ুন
ক্রিকেট খেলতে শিখেছেন চিনা ভাষা, অবনীন্দ্রনাথের প্রহার লজ্জা দিয়েছে বার্ধক্যেও

তবে শুধু রণদীভই নন। শ্রীলঙ্কার আরও এক আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় চিন্তাকা নমস্তেও বর্তমানে মেলবোর্নে একই কাজ করছেন। এই ঘটনা কি শুধুই ভাগ্যের পরিহাস? নাকি এর পিছনে লুকিয়ে রয়েছে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট বোর্ডের অপেশাদারিত্বও? এই প্রশ্নই ফিরে ফিরে আসছে বার বার…

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ওজন ১৪০ কেজি, অজস্র ব্যঙ্গের শিকার হয়েও মাঠ কাঁপাচ্ছেন বিশ্বের স্থূলতম ক্রিকেটার