বৃষ্টি হলেই গেয়ে ওঠে আস্ত বাড়ি, জার্মানির বুকেই রয়েছে এমন বিস্ময়

বৃষ্টির দিনে দু’কলি গানের লাইন গুনগুন করে ওঠেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। শুধু মানুষ নয়, ‘গহন মেঘের ছায়া’ ঘনিয়ে এলে গান গেয়ে ওঠে আমাদের চারপাশটাও। প্রকৃতি তো বটেই, এমনকি মানবসৃষ্ট স্থাপত্যও। না, নিছক টিনের চালে বৃষ্টি-ফোঁটার শব্দ নয়। বরং, রীতিমতো নোটেশন মেনেই সুরের ঝংকার। অবাক লাগছে নিশ্চয়ই? তবে জার্মানির (Germany) ড্রেসডেন (Dresden) বর্ষামুখরিত দিনে গিয়ে হাজির হলে স্তম্ভিত হয়ে যাবেন আপনিও। বৃষ্টির তালে তালে আপন মনে অর্গান বাজিয়ে চলেছে আস্ত একটি বাড়ি।

কারোর কাছে এই আশ্চর্যকর বাড়ি পরিচিত ‘সিঙ্গিং হাউস’ (Singing House) নামে। কেউ আবার ‘মিউজিক্যাল হোম’ বলে ডাকেন এই বাড়িকে। আদতে গোটা বাড়ির দেওয়াল জুড়েই জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র অ্যালুমিনিয়ামের পাইপ। মূলত সেগুলি জলনিকাশি ব্যবস্থারই অংশ। তবে তাদের গঠন এবং বিন্যাস হুবহু অর্গানের মতোই। কখনো কখনো তারাই আবার ট্রাম্পেট। তৈরি করা হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবেই। ঝড়ো হাওয়া দিলে যেমন তারা বেজে ওঠে আপন খেয়ালে, তেমনই বৃষ্টির ফোঁটা পড়লে কিংবা পাইপের মধ্যে দিয়ে জল প্রবাহিত হলেও গান ধরে তারা। 

কয়েক দশক আগে অভিনব এই বাড়িটি তৈরি করেছিলেন সেন্ট পিটার্সবার্গের সাবেক বাসিন্দা তথা খ্যাতনামা ভাস্কর আনেট পল। পিটার্সবার্গে অবস্থিত তাঁর পুরনো বাড়িতেও ছিল অ্যালুমিনিয়ামের ছাদ। বর্ষার দিনে সেখানে শোনা যেত ‘রেন থিয়েটার’। তবে সেই সুর ছিল অবিন্যস্ত। তাতে আলাদা করে কোনো শব্দের তারতম্য বোঝা যেত না। তবে ধাতব ছাদে বৃষ্টির সুর থেকেই অনুপ্রাণিত হন পল। কিন্তু কীভাবে বৃষ্টির সুরের মধ্যেও তারতম্য আনা যায়, তা জানা ছিল না তাঁর। জার্মানিতে আসার পর ডিজাইনার ক্রিস্টোফ রসনার ও আন্দ্রে টেম্পলের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। তাঁরাই বাস্তব নকশার রূপ দেন আনেট পলের স্বপ্নের পরিকল্পনাকে। শুধু এই বাড়ির কারিগরই নয়, বরং তিন শিল্পীই বর্তমানে স্থায়ী বাসিন্দা ‘সিঙ্গিং হাউস’-এর।

নেইস্টাড কানস্থোফপ্যাসেজে অবস্থিত এই বাড়িই অন্যতম আকর্ষণ ড্রেসডেন শহরতলির। এই বাড়ির সঙ্গীত পরিবেশন শুনতেই প্রতিবছর বর্ষাকালে জার্মানিতে হাজির হন হাজার হাজার পর্যটক। 

আরও পড়ুন
একের পর এক হেরিটেজ স্থাপত্য ধ্বংস রাজ্যে, দায়ী কে?

তবে সিঙ্গিং হাউস, ড্রেসডেনের একটি বৃহত্তর প্রোজেক্টের অংশমাত্র। ‘কোর্টইয়ার্ড অফ এলিমেন্টস’ নামাঙ্কিত সেই প্রোজেক্টের মধ্যে রয়েছে ৫টি এমনই বিস্ময়কর স্থাপত্য। প্রতিটিরই স্থপতি আনেট। সেগুলি কোনোটা তৈরি করা হয়েছে পৌরাণিক গল্পের আদলে, আবার কোনোটাতে ফুটে উঠেছে বাস্তুতন্ত্রের ছবি। প্রতিটি স্থাপত্যের মধ্যেই রয়েছে অভিনবত্ব, স্বতন্ত্রতা এবং শিল্পের অভিপ্রকাশ। কিন্তু তার মধ্যে একমাত্র জীবন্ত স্থাপত্য হয়তো ‘সিঙ্গিং হাউস’-ই। তাই তার কদরও খানিক বেশি অন্যদের থেকে। কী ভাবছেন? একবার ঢুঁ মেরে আসবেন নাকি এই জার্মান শহরে? সাক্ষী হবেন ‘শ্রাবণ-বর্ষণ-সঙ্গীত’-এর?

আরও পড়ুন
রাস্তায়-রাস্তায় ‘বই বেঞ্চ’, বিস্ময়কর স্থাপত্য বুলগেরিয়ায়

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
১৮ হাজার ডলারে ‘অদৃশ্য’ স্থাপত্য বিক্রি ইতালির শিল্পীর!