২৯ দিন নিঁখোজ থেকেও নিরুত্তাপ সমুদ্রফেরত দুই ব্যক্তি

পাপুয়া-নিউগিনি থেকে কিছুটা পূর্বদিকে গেলে সমুদ্রের বুকে ছোট্ট এক দ্বীপপুঞ্জের নাম সলোমন দ্বীপপুঞ্জ (Solomon Island)। মাসখানেক আগে সেখান থেকেই উধাও হয়ে গিয়েছিলেন দুই ব্যক্তি। আসলে সমুদ্রে ভ্রমণের জন্যই বেরিয়েছিলেন নৌকো নিয়ে। কিন্তু আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নষ্ট হয়ে যায় তাঁদের সঙ্গে থাকা জিপিএস ট্র্যাকার যন্ত্রটিও। অবশেষে ২৯ দিন পরে পাপুয়া-নিউগিনির উপকূলে সন্ধান পাওয়া গেল তাঁদের। তবে এই প্রায় এক মাস সময় মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তাঁরা যে খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন, এমনটা নয়। বরং ফিরে এসে তাঁরা বলছেন, বেশ একটা ছুটি কাটিয়ে আসা গেল। তাঁদের মুখ থেকে এমন কথা শুনে অবাক অনেকেই।

গত জুলাই মাসে এই সলোমন সাগরেই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন পাপুয়া-নিউগিনির বগোনভিল দ্বীপের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্যারি ন্যাপ্টো, তাঁর স্ত্রী-পুত্র ও আরও ৪ জন। বহু অনুসন্ধানের পর কেবল একজনকে পাওয়া গিয়েছে। বাকিরা সম্ভবত সমুদ্রের প্রাণ হারিয়েছেন। তারও সপ্তাহখানেক আগে আরও একটি দল নিখোঁজ হয়ে যায় এই সমুদ্রে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ সমুদ্রগুলির মধ্যে অন্যতম এই সলোমন সাগর। অথচ সেখানে পথ হারিয়ে ফেলার পরেও বিচলিত হননি লিভা নানজিকানা ও জুনিওর কোলোনি।

গত ৩ সেপ্টেম্বর একটা ৬০ হর্সপাওয়ারের ইঞ্জিন লাগানো ছোটো নৌকো নিয়ে বেরিয়েছিলেন দুজনে। উদ্দেশ্য ছিল চেনাপরিচিত সমাজের বাইরে কয়েকটাদিন ঘুরে আসা। যেখানে কোনো উদ্বেগ নেই, কোনো দুশ্চিন্তা নেই। নানজিকানা এমনিতে একজন পাকা নাবিক। এর আগে বহু সমুদ্রে একাই পাড়ি দিয়েছেন তিনি। সলোমন সাগরে তো বটেই। কিন্তু সমুদ্রের ঝড় বহু পাকা নাইককেও বিপাকে ফেলে দেয়। তেমনটাই হল নানজিকানার সঙ্গেও। তিনি জানিয়েছেন, ঝড়ের ধাক্কা প্রাথমিকভাবে সামলে নেওয়া গিয়েছিল। কিন্তু ঝড় থামতেই দেখা গেল, তাঁদের সঙ্গে থাকা জিপিএস সিস্টেমটাই কাজ করছে না। তাই কোথায় রয়েছেন সে সম্বন্ধে আর কিছুই জানেন না। এদিকে আকাশও মেঘে ঢাকা। ফলে তারা দেখে অবস্থান বোঝারও উপায় নেই।

শেষ পর্যন্ত তাঁরা ঠিক করলেন, নৌকোর ইঞ্জিন বন্ধ করে তাকে স্রোতের অনুকূলেই ভাসতে দেবেন। আর সঙ্গে খাবার জন্য কিছু নারকেল আর কমলালেবু তো ছিলই। এভাবেই ভাসতে ভাসতে শেষ পর্যন্ত ৪০০ কিলোমিটার দূরে বগোনভিল দ্বীপে এসে উঠলেন তাঁরা। দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার কারণে কিছুটা শারীরিক ক্লান্তি ছিলই। কিন্তু তারপরেও ছুটিটা ভালোই কেটেছে, বলছেন তাঁরা। এই কয়েকদিন তাঁরা কোভিড নামক কোনো রোগের কথা শোনেননি। শোনেননি অদৃশ্য এই ভাইরাসের কারণে মারা যাচ্ছেন একের পর এক মানুষ। এই শান্তিটুকুই তো খুঁজছিলেন তাঁরা।

Powered by Froala Editor