ইংরেজ সেনানীর মৃত্যুস্থল খুঁজতে গিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নমুনা উদ্ধার মণিপুরে

ইতিহাসকে আমরা খুঁজি বইয়ের পাতায় অথবা যাদুঘরে। কিন্তু আমাদের চারপাশেই যে অসংখ্য ইতিহাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে, তাকে আমরা কজনই বা খুঁজে দেখি? খুঁজে দেখার কাজটাও খুব সহজ নয়। আর এই কঠিন কাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে অসংখ্য কাহিনি। তেমনই কাহিনির জন্ম দিলেন মণিপুরের একদল পর্বতারোহী। তাঁদের অভিযান খুঁজে পেল ৭৬ বছরের পুরনো অখ্যাত ইতিহাসের নমুনা। ইতিহাস বলতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধে ঔপনিবেশিক কারণেই জড়িয়ে পড়েছিল ভারতও। এই সীমান্ত অঞ্চল সাক্ষী থেকেছে অনেক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের। তেমনই কিছু সংঘর্ষ ঘটেছিল ইম্ফল এবং কোহিমায়। ইতিহাসের পাতায় সেইসব যুদ্ধের কাহিনি সেভাবে জায়গা পায়নি। কেউ খোঁজও রাখেননি। কিন্তু ইয়ুমনাম রাজেশ্বর এবং তাঁর সঙ্গীরা খুঁজে পেলেন সেই ইতিহাসই।

২০১৩ সালে ব্রিটেন ন্যাশানাল আর্মি মিউজিয়াম জানায়, ব্রিটিশ ইতিহাসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যুদ্ধগুলির মধ্যে দুটি হল ইম্ফল এবং কোহিমার সংঘর্ষ। এই এলাকায় ৩০ হাজার জাপানি সেনাকে হত্যা করে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের পরিণতি অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেছিল ব্রিটিশ বাহিনী। কিন্তু এর থেকে বেশি আর কিছুই জানা যায় না। এমনকি যুদ্ধে যে অসংখ্য ব্রিটিশ সেনানী প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদেরও কোনো তালিকা পাওয়া যায়নি। কিন্তু সেইসব স্বজনহারা পরিবার আজও খুঁজে চলেছে পূর্বপুরুষের অন্তিম যুদ্ধের স্থান। তেমনই একটি পরিবার ডেভিড টডের পরিবার। ডেভিড টডের প্রপৌত্রী এলি বারেট টডের মৃত্যুর স্থান খুঁজে দেখার জন্যই যোগাযোগ করেন রাজেশ্বরের সঙ্গে।

রাজেশ্বর জানতেন বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক প্রশাসনিক জটিলতা। এসবের মধ্যে জড়িয়ে পড়তে চাননি তিনি। কিন্তু বারেটের মিনতি শেষ পর্যন্ত ফেলে দিতে পারলেন না তিনি। আর তাই শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন। কিন্তু বারেটকে প্রতিশ্রুতি দিতে হল, এই অনুসন্ধানের বিশদ বিবরণ কোথাও প্রকাশ করা যাবে না। শেষ পর্যন্ত এক পূর্ণিমার রাতে শুরু হল অভিযান। ১০ জনের সদস্য দলটি রওয়ানা হলেও, শেষ পর্যন্ত ৯ জন পৌঁছতে পেরেছেন। একজন অসুস্থ হয়ে মাঝরাস্তায় অভিযান থেকে বাদ পড়লেন। ৭৬ বছরের পুরোন এক ডজন ম্যাপ দেখে দেখে শেষ পর্যন্ত পৌঁছে গেলেন সেই প্রাচীন যুদ্ধক্ষেত্রে।

ম্যাপে চিহ্নিত এলাকায় পৌঁছে যুদ্ধের অনেক নিদর্শনই পাওয়া গেল। তার মধ্যে যেমন আছে রাইফেল, বুলেটের মতো যুদ্ধের সরঞ্জাম; তেমনই আছে পুরোন তাঁবুর ছেঁড়া অংশ, খাবারের সরঞ্জাম ইত্যাদি। জনা দশেক মৃত মানুষের হাড়ও পাওয়া গেল মাটি খুঁড়ে। কিন্তু তার মধ্যে ডেভিড টডের মৃতদেহ আছে কিনা, সেবিষয়ে নিশ্চিত হওয়া এখনই সম্ভব নয়। তবে যে প্রাচীন ইতিহাসের সন্ধান পাওয়া গেল, তার মূল্য সহজে বোঝা সম্ভব নয়। সামরিক ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্যই খুঁজে পাওয়া যেতে পারে ইম্ফল শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের এই দুর্গম অঞ্চলে। তবে তার জন্য অনেক প্রশাসনিক আলাপ-আলোচনা প্রয়োজন। আর তার আগে অভিযানের বিবরণ জানাতে রাজি নন রাজেশ্বর এবং তাঁর সহযোগীরাও। তবে বারেট নিশ্চিত, এখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তাঁর পূর্বপুরুষ। আর সেই এলাকার সঠিক অবস্থান জানতে পেরে তিনি নিশ্চিন্ত।

আরও পড়ুন
মণিপুর থেকে উদ্ধার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ২৭টি বোমা, রয়েছে সক্রিয় অবস্থাতেই

Powered by Froala Editor