বেহাল চিকিৎসার পরিকাঠামো, সামাজিক মাধ্যমেই সাহায্য খুঁজছেন মানুষ

সামাজিক মাধ্যম খুললেই আজকাল একধরণের পোস্ট সবারই নজরে এসেছে। মহামারী করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গুজব বা আতঙ্ক, কোনোটাই ছড়ানো উদ্দেশ্য নয়। বরং সামাজিক মাধ্যমের সূত্রে সামান্য পরিচিত মানুষদের কাছেই সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন মানুষ। কেউ জানাচ্ছেন, প্রিয়জনের চিকিৎসার জন্য রক্তের প্রয়োজন। কেউ প্লাজমার আবেদন জানাচ্ছেন। কেউ আবার জানতে চাইছেন, কীভাবে প্রতিষেধক পাওয়া যাবে। হাসপাতালের চার দেয়ালের সীমানা পেরিয়ে মহামারী মোকাবিলায় হাতিয়ার হয়ে উঠছে সামাজিক মাধ্যমগুলিই। সারা দেশেই ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং টুইটার ভেসে যাচ্ছে একইরকম আবেদনে।

মানুষ সবসময়ই প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমের চরিত্রকে বদলে নিয়েছেন। তবে তিন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের মুহূর্তেও সামাজিক মাধ্যমে এমন ধরণের পোস্টের বন্যা বুঝিয়ে দেয় পরিস্থিতি কতটা কঠিন হয়ে উঠছে। রক্ত, প্লাজমা বা প্রতিষেধকের প্রয়োজনে মানুষ হাসপাতালে যোগাযোগ করবেন, এটাই অভিপ্রেত। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে এরকম আবেদন এত বেশি সংখ্যায় ছড়িয়ে পড়ছে কেন? তার কারণটা হাসপাতালগুলির সামনে গেলেই বোঝা যাবে। করোনা স্পেশালিটি হাসপাতালগুলিতে উপযুক্ত চিকিৎসা পরিকাঠামো তো দূরের কথা, নেই প্রয়োজনীয় শয্যাটুকুও। একই অবস্থা বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, কোনোভাবেই কোনো রোগীকে প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। কিন্তু যেভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে সমস্ত রোগীকে জায়গা দেওয়া এক কথায় অসম্ভব। এক হাজার বা তার বেশি সংখ্যক শয্যা আছে যেসব ইউনিটে, সেখানেও কোথাও ১০০টি কোথাও তার থেকেও কম শয্যা খালি আছে। আর ছোট ইউনিটগুলির  অবস্থা তো বলাই বাহুল্য।

দেশের দৈনিক সংক্রমণ ২ লক্ষের গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে। গত একবছর ধরে চলমান মহামারীতে এই পরিসংখ্যান কখনো দেখা যায়নি। এর মধ্যেই ইতালিতে ট্রায়াজ পদ্ধতি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। অর্থাৎ, করোনা সংক্রমণ দেখা দিলেই কোনো রোগী চিকিৎসা পাবেন না। যদি চিকিৎসকরা মনে করেন চিকিৎসার ফলে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে, একমাত্র তবেই তাঁর চিকিৎসা করা হবে। অন্যথায় চুপচাপ মৃত্যুর জন্য প্রতীক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। ভারতে এখনই ট্রায়াজ পদ্ধতি নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা হয়নি বলেই জানাচ্ছে সরকার। তবুও মানুষ যেন নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। সত্যিই তো উপযুক্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না অনেকে। যদিও এর মধ্যে হাসপাতালগুলির শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ঘাটতি তো শুধু শয্যার নয়। রক্ত, ওষুধ, প্রতিষেধক এমনকি চিকিৎসকের ঘাটতিও যে যথেষ্ট। সরকারের পাশাপাশি তাই সাধারণ মানুষের মিলিত অংশগ্রহণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে। আর এই সময়েই নতুনভাবে হাজির হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমগুলি। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেও মানুষের মধ্যে একধরণের ঐক্যের পরিবেশ তৈরি করে দিচ্ছে এই প্ল্যাটফর্মগুলিই।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় না মস্তিষ্ক, প্রমাণ দিলেন গবেষকরা